রাতে আমি আর ইয়াকুব মেঝেতে বিছানা পেতে ইয়াকুবের মায়ের সাথে ঘুমালাম। মামি আর স্যার ইয়াকুবের ঘরে ঘুমাতে গেলেন।
ইয়াকুব আমাকে একটা
গল্প শোনাতে চাইলো। স্বপ্ন। আমি বললাম,
তোর
ফাউল স্বপ্ন বাদ দে। আমার ভালো লাগে না।
আরে শোন না। এটা
ভালো লাগবে।
আমি বিরক্ত ভঙ্গিতে
বললাম, ক। ইয়াকুব শুরু কারলো।
যেদিন বাড়িতে আসি।
আম্মু আমাকে বলল,
বাপ ইয়াকুব, কয়দিন ধইরা শইলডা ভালা যাচ্চে না। ভিটামিন ওশুধ
খাওন দরকার। বাজার থ্যাকি এক ফাইল অ্যানি দেতো।
আমি আম্মুকে ভিটামিন
ঔষুধ এনে দেয়ার জন্য বাজারে গেলাম। কেন জানি কোন দোকানে ভিটামিন ঔষুধ পেলাম না। আমি
অন্য এলাকায় গেলাম ভিটামিন আনতে। সেখানকার দোকান গুলোতেও ভিটামিন সাপ্লাই নাই বলল।
আমার মধ্যে একটা ছটফটানি কাজ করতে লাগলো। শালার ভিটামিন না নিয়ে আজ বাড়ি ঢুকবো না।
আমি মুদি দোকানে গিয়েও জিজ্ঞাসা করলাম,
ভিটামিন
আছে? সব পাবলিক আমার দিকে হা করে
তাকিয়ে রইলো। অনেক খোঁজাখুজির পর আমার মনে হল, কনফেকশনারীর দোকানে পাওয়া যেতে পারে। একটা কনফেকশনারীতে জিজ্ঞাসা
করলাম। দোকানদার একটু বয়স্ক। বলল,
বাবা, ঔশুধ তো ফারমেসীতে পাবা। আমার এইহানে বিস্কুট-চানাচুর, রুটি-পাউরুটি এসব বিক্কিরি হয়।
আমি বললাম, এখানে ফার্মেসী কোথায় বলতে পারেন? চাচা আঙুল তুলে একটা ছোট্ট দোকান দেখায় দিল।
বলল, ঐ লোকের কাচে পাতি পারো।
আমি গেলাম। ছোট্ট
একটি দোকান। দোকানের নাম 'লাইলি অশুধ ঘর'। বেঁটে-খাটো কুঁজো এক লোক বসে আছে। এক ঠ্যাঙয়ের
উপর আরেক পা তুলে আছে। বাম হাতে বিড়ি আর ডান হাতে চায়ের কাপ। খাচ্ছে। এক চুমুক চা গিলে
এক টান বিড়ি। দোকানের ঔষুধের প্যাকেটগুলিতে ধুলো জমে গেছে। বিক্রিও হয় না, পরিষ্কারও করে না।
আমি বললাম, কাকু ভিটামিন আছে?
কুন ব্যান্ডের?
ভিটামিন হলেই হলো।
ভাল দেখে একটা দেন।
সেই লোক চায়ের কাপ
রেখে বিড়ি হাতে ভিটামিন খুঁজতে গেল। অনেক খোঁজাখুজির পর একটা বোতল আনলো। বলছে, এক ঢাকনি খাবে তো শরীলে বল লাফায়ে উঠবে। পরের
ঢাকনি খাওয়ার সুমায় চিন্তায় পড়বে। এত বল গায়ে হলে বাঁচবা কেমনে?
লোকটি 'খাওয়ার আগে বুতোল এইভাবে ঝাঁকাবে' দেখাতে গিয়ে বোতলটি ফেলে দিল। হাত থেকে পড়া মাত্র
বোতলটি ভেঙ্গে গেল।
তারপর?
লোকটি থাম বাপ, বলে আবার ভেতরে গেল। আরেকটি বোতল এনে মুছে দিল।
বুজেছো তো? অশুধ খাওয়ার আগে ঝাঁকাতে হয়।
এ দফায় বোতলটা আর
ঝাঁকিয়ে দেখালো না। শুধু বলে দিল।
আমি বোতল নিয়ে বাড়ি
আসছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে এসে মনে হল, এক্সপায়ার ডেট আছে নাকি দেখি তো! তাকিয়ে দেখি ৮ মাস আগে শেষ।
আম্মু এসব বোঝে না। বোতল নিয়ে রেখে দিলে এক চামচ দুই চামচ করে খাবে। টাকা দিয়ে কেনা
জিনিষ ফেলবে না। আমি সে ভয়ে বাড়িতে ঢোকার আগেই বোতলটা ভেঙ্গে বাইরে ফেলে দিলাম। সবশেষে
মায়ের জন্য ভিটামিন আনা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না।
এইটা তোর স্বপ্ন?
আরে না। এইটা সেদিনের
বিকেলের ঘটনা।
তাহলে স্বপ্ন কোনটা?
সেদিন রাতে। আমি
ভিটামিন আনতে পারলাম না জন্য মনটা খুব খারাপ। বিষন্ন মনে ঘুমুতে গেলাম। সারারাত আমি
ঔষুধ আনার এরকম কয়েকটা স্বপ্ন দেখলাম। কোনটাতেই আমি অবশেষে ঔষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারিনি।
সবগুলা স্বপ্ন মনে নাই। শেষ যেটা দেখলাম সেটা মনে আছে।
বল, শুনি।
(স্বপ্ন)
আমি কোনদিন উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়নি। তার আকার আকৃতি,
সেপ-সাইজ
সম্পর্কে কোন ধারণা নাই আমার। স্বপ্নে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরতে গেছি।
একাই। একটি বিল্ডিংয়ের বারান্দা দিয়ে হাটছি। একটা ব্লকের অর্ধেক অতিক্রম করার পর বাঁক
নিয়েছি। বাঁকটা ক্রস করেছি। আর দেখি অনেক বড় রুম। সেখানে সিরিয়ালি অনেকগুলো লাশ সাদা
কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। একজন লোক ঘুরে ঘুরে দেখছে সব লাশগুলো ঠিকঠাক মত আছে কিনা। লোকটা
এপ্রন পরা। বেশ ভদ্রলোক। তাকে ঘিরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারাও এপ্রন পরে আছে।
এদের পায়চারি দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে এটা
মেডিকেল কলেজ। লাশের সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে প্রতি স্টুডেন্ট এর জন্য একটি করে লাশ বরাদ্দ।
পুরো ব্লকের এই অংশটুকুতে কোন হৈ চৈ নেই। একদম শুনশান, নীরব। একজন কেরানীকে ক্লাশ রুমের দরজার সামনে
বসিয়ে রাখা হয়েছে, যেন অন্য কেউ বারান্দা
দিয়ে হেটে না যায়। লাশ দেখে ভয় পেতে পারে নয়তো তাদের ডিস্টার্ব হবে- ব্যাপারটা এরকম।
আমি হাটতে হাটতে ফট করে বারান্দার অনেকখানি ভেতরে চলে গেছি। পরে সেই স্যার আর কেরানি
মিলে আমাকে আর সামনে এগুতে দিল না। তারা দুজনই আমার সাথে বেশ ভাল ব্যবহার করলো। ছাত্ররা
আমার দিকে কৌতুহলি চোখে তাকাচ্ছিল। এদের কাউকেই আমি চিনি না। সেখানে কিছু ছাত্রীও ছিল
সেটা বুঝতে পারলাম। কিন্তু কোন মেয়ের মুখ দেখতে পায়নি। আসলে ওই অল্প সময়ে তেমনভাবে
তাকানোর টাইম হয়নি। লাশের সারি দেখে বড়ই হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। এত লাশ!
হঠাত একজন আমাকে
ডেকে বলল, আপনি ইয়াকুব না?
আমি বললাম- জি, আমি ইয়াকুব।
আপনার আম্মা কে হসপিটালে
ভর্তি করেছিলেন মনে আছে? কয়দিন আসেন নাই মিয়া।
খোঁজ-খবর নিতে হয় না? কেমন ছেলে আপনি?
আমি চিন্তায় পড়ে
গেলাম। ভাবলাম যে ভুলে গেছি হয়তো। আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম, আমি তো ডেইলি আসি। আজ এসে আগের বেডে খুঁজে পাচ্ছি
না। অন্য কোন ওয়ার্ডে শিফট করেছেন নাকি?
লোকটি
আমাকে ৯ নম্বরে যেতে বলল। আমি দৌড় লাগালাম।
গিয়ে দেখি লাশঘর।
বাইরে থেকে তালা লাগানো। আমার মাথা তো হ্যাং। আমি তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করছি প্রাণপণ।
সাদা এপ্রন পরা এক মহিলা এসে আমাকে বলল,
ইয়াকুব
থামেন। আপনি এসেছেন শুনেছি। আমি ডেথ সার্টিফিকেটটা আনতে গেছিলাম। আপনার মা আজ সকালে
মারা গেছেন। আমরা খুব সরি। বহু চেষ্টা করেছি আমরা। ডাক্তাররা কয়েকজন মিলে চেষ্টা করেছেন।
কোনভাবেই তার জ্ঞান ফেরেনি। অবশেষে চেয়ারম্যান স্যার দেখে মৃত বলেছেন। আমার অবশ্য বিশ্বাস
হয়নি। তবে স্যার যখন বলেছেন- ভেবে চিন্তেই বলেছেন।
মহিলাটি তালা খুলে
আমাকে ঘরে নিয়ে গেল। আম্মুকে বেশ যত্ন সহকারে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
একটা খাটিয়া টাইপ বেঞ্চিতে। আমি ডেথ সার্টিফিকেটটা পড়ার জন্য চেয়ে নিলাম। দেখি তাতে
লিখা 'ভেরি পেইনফুল ডেথ'। ডাঃ অষোক ঘোষ, চেয়ারম্যান, 'অমুক' উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্স। সীলের কালিটা 'অমুকের' জায়গায় আবছায়া হয়ে আছে। নামটা বোঝা গেল না।
আমি বললাম, পেইনফুল ডেথ মানে? এটা কেমন কথা?
মহিলাটি বলল, ডাক্তার বলেছেন, মারা যাওয়ার আগে তার অনেক কষ্ট হয়েছে। কী হয়েছিল
আমি জানি না। আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না,
প্লিজ।
আমার দু'চোখ ভরে পানি আসছিল তখন। আম্মু মারা গেছে তার
জন্য নয়। পেইনফুল ডেথ শুনে। আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। তার চোখ খোলা। দৃষ্টি স্থির।
আম্মুর মাথায় হাত রাখলাম আর দেখি নিশ্বাস নিচ্ছে। মুখ হাসি হাসি। আমি বললাম, আম্মুতো তো বেঁচে আছে।
মহিলাটি বলল, আমি জানি। কিন্তু ডাক্তাররা কোনভাবেই জ্ঞান ফেরাতে
পারেননি। তাই মৃত বলে দিয়েছেন।
আমি আম্মুকে ঝাঁকাতে
লাগলাম। মুখে হাত বুলিয়ে দিলাম। তার চোখ স্থির আর মুখের এক্সপ্রেশনে কোন পরিবর্তন নেই।
অনেক ঝাঁকাঝাঁকি-ডাকাডাকিতেও আম্মুর জ্ঞান ফিরলো না।
মহিলাটি আমাকে বলল, শোনেন মিস্টার ইয়াকুব। আপনার মা মারা যায়নি।
একটা ঔষুধের কথা আমি জানি। এরকম রোগীকে ঐ ঔষুধটা দিয়ে ট্রিট দেয়া হয়। ডাক্তাররা কেন
সেটা ব্যবহার করলেন না বুঝলাম না। আমি লিখে দিচ্ছি আপনি কিনে আনেন। আমরাই ট্রাই করে
দেখি। আমি নিজে হাতে এই ইঞ্জেকশনটা কয়েকজনকে দিয়েছি। সবাই বেঁচে ফিরেছে পরে।
মহিলাটি ডেথ সার্টিফিকেটের
পেছনে ঔষুধের নামটা লিখে দিল। আমি দৌড়ে চলে গেলাম ফার্মেসীতে। গুণে রাখলে এই ফার্মেসীর
সংখ্যা হাজার খানেক হতো। স্বপ্নে আমি পুরো দশদিন টানা ফার্মেসী ফার্মেসী ঘুরেছি। কেউ
এ নামে কোন ঔষুধ দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না। অবশেষে দশদিনের মাথায়- সন্ধ্যায় আমার
অই কুঁজো লোকটার কথা মনে হল। তার কাছে পাওয়া যায় কিনা দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি 'লাইলি অশুধ ঘর' বন্ধ। খোঁজ-খবর করে লোকটার বাড়ি গেলাম। ঔষুধের
নামটা দেখালাম। লোকটা বলল, আছে আমার কাছে। আর
এক ফাইল থাকার কথা।
আমরা দোকানে আসলাম।
লোকটি দোকান খুলে ঔষুধ বের করলো। ঔষুধটি হাতে দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিল। তিনটা সিরিঞ্জ
আছে। তিনটা ফাইল। দশ মিনিট ব্যবধানে তিনবার শিরদাঁড়ার তিনটি ভিন্ন অবস্থানের প্রতি
দুই কশেরুকার মাঝখান দিয়ে স্পাইনাল কর্ডে সিরিঞ্জ ঢুকাতে হবে আর ঔষুধ পুশ করতে হবে।
অতি দক্ষ লোক ছাড়া এই ইঞ্জেকশন করতে পারবে না। তিনবারের কোন একবার ভুল হলে রোগী আর
বাঁচবে না। একটা মানুষের দেহে এই ঔষুধ একবারই মাত্র পুশ করা যাবে। মানে প্রথম তিনবার।
দ্বিতীয়বার পুশ করলে পুরো স্পাইনাল কর্ড গলে পানি হয়ে যাবে। আর সফলভাবে তিনবার ইঞ্জেকশন
করতে পারলে রোগীর জান থাকলে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসবে।
আমি লোকটার কথা শুনে
আনন্দে আত্বহারা টাইপ। ঔষুধ নিয়ে হসপিটালে দৌড়াচ্ছি। আম্মু কথা বলবে। আবার জেগে উঠবে।
আমি দৌড়াচ্ছি কিন্তু পথ ফুরাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করলাম হসপিটালে পৌঁছানোর। কিন্তু
অবশেষে ঔষুধটা নিয়ে আর আম্মুর কাছে পৌঁছাতে পারিনি।
কেন? কী হলো রাস্তায়?
আমি মাঝপথে আর ঘুম
ভেঙ্গে গেল। আম্মু ডাকছে।
ইয়াকুব, উঠ বেটা। গরুটার জন্যি ঘাস ক্যাটি আন।
তারপর, ঘাস কাটতে গেলি?
হ। আর সেদিনই আম্মু
অজ্ঞান হয়ে উঠোনে পড়ে গেল। আমার সামনে।
বলিস কী?
হ, আর তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার
পর ঐ মহিলার মত এক ডাক্তার কে দেখলাম। স্বপ্নের মহিলা যতটা মার্জিত ছিল বাস্তবে দেখা
ডাক্তারটা ততটাই ডাইনি টাইপ মনে হল। এত খারাপ ব্যবহার! একটা কথাতেও মনে হলো না, ও দুনিয়াতে মেয়ে হয়ে জন্মেছে। কোন কোমলতা নেই
ভেতরে।
সরকারি মেডিকেলের
ডাক্তাররা ওরকমই হয়।
অন্য ডাক্তারগুলা
তো ওরকম না। শুধু ঐ মহিলাটাই ডাইনি বুড়ি।
আমি, একরামুল স্যার, মামি সবাই ইয়াকুবের বাড়িতে টানা তিনদিন কাটালাম।
এই তিনদিন একরামুল স্যার ভালো খরচাপাতি করলেন। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে
দিলেন ইয়াকুবকে। আমার একহাজার টাকা খরচ করা লাগলো না। আসার সময় ইয়াকুব আমাকে ২কেজি
মসুর ডাল আর বয়মে করে প্রায় হাফ কেজির মত ঘি দিল। আমি নিতে চাইলাম না। তবে না নিয়েও
পারলাম না। ইয়াকুব বলল, আম্মুর হাতের ভর্তা
তোর কপালে নাই। এগুলা নিয়ে যা। হলে গিয়ে খাস।
একরামুল স্যার মামিকে
নিয়ে কোন আত্বীয়ের বাড়ি যাবেন। সেখান থেকে রাজশাহীতে। ইউনিভার্সিটি বন্ধ। কবে খুলবে
হদিস নেই। স্যার মামিকে বললেন, চলো যুথী, ঘুরে যাই। মামি না করলেন না।
আমি যাবো আমার বাড়ির
দিকে। স্যারদের সাথে বের হলেও আমার রাস্তা অন্যদিকে। ইয়াকুব অবশ্য আমাকে আর কয়দিন থেকে
যেতে বলল। থাকলেও পারতাম। থাকলাম না।
ইয়াকুবের বাড়ি থেকে
বের হচ্ছি। বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে একটা মা কুকুর তার বাচ্চার সাথে খেলছে। বাচ্চাটা
চিত হয়ে শুয়ে আছে। হাত-পা জড়িয়ে কাঁচুমাঁচু অবস্থা। কুঁ কুঁ করছে। মা কুকুরটা মুখ দিয়ে
বাচ্চার পেটে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আর কাঁউ কাঁউ শব্দ করছে। ইয়াকুব মামির ট্রাভেল ব্যাগ
হাতে স্যারের পিছে পিছে কুকুরটাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। মা-বেটার
কাতুকুতু দেখতে লাগলাম। কাতুকুতু বন্ধ করে তারা দুজনই 'থ'
হয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
ইয়াকুব বাড়ি আসার
পর একটা গান লিখেছে। আন্টির ঘরে ঔষুধের ঝাঁকার মধ্যে ভাঁজ করা একটি কাগজে লেখা। প্রথমে
ভাবলাম প্রেসক্রিপশন হবে হয়তো। খুলে দেখি ইয়াকুবের লেখা। পড়ে মুখস্ত করে নিলাম। ইয়াকুব
গানটার সুর দিয়েছে কিনা জানি না। জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
সেদিনও আকাশে
জানো, হেসেছিল চাঁদ,
পরালো এসে টিপ
এই কপালে।
ঘুমিয়েছি সেদিনও
জানো, আমি সারারাত,
রেখেছিলে হাত তাই
এই কপালে।
সেদিনও হেসেছি আমি
দম ফাটিয়ে,
আজ কেন রয়েছি
বলো, গোমরা মুখে।
ভাবিনি কখনো আমি
জ্বলবে তুমি,
একা তারা হয়ে
ঐ দূর আকাশে।
যেও না কখনো শোন
ঐ দেশেতে, যেথা
সন্ধ্যাতারা হয়ে
তুমি জ্বলবে।
আমার হঠাৎ মনে হল-
টিনের চালের টেপটা খুলে দিয়ে আসি। বসন্তের আকাশেতো শীতের কুয়াশা থাকে না। বর্ষাকালে
ইয়াকুব একটা ব্যবস্থা করে দিবে আবার।
আমি হাটছি। একটু
দূরে গিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। কুকুরটা আবার তার বাচ্চাকে কাতুকুতু দিচ্ছে। বাচ্চাটি
হাত-পা গুটিয়ে কুঁ কুঁ করছে। আমার দিকে তাদের আর খেয়াল নেই।
চলবে...
No comments:
Post a Comment