উৎসর্গ: তোমাকে
সত্যি বলছি!
পানপাতা চিবাও আর না চিবাও; তোমার রক্তিমতা গোধূলির
লালিমাকেও চ্যালেঞ্জ করবে!
ইয়াকুব
পর্ব ১
এই সজীব, হাতমুখ ধুয়েছিস?
না রে, কয়টা বাজে?
সাড়ে সাতটা।
বাইরে কুয়াশা কেমন?
ঘন কুয়াশা। জানুয়ারি শেষ হলো আর শীতকাল মনে হচ্ছে
নতুন করে আসছে। ঋতু বদলাচ্ছে। দেখিস এবার ফেব্রুয়ারিও শীতেই যাবে।
হ, কখন উঠলি ঘুম থেকে?
আজ সকাল সকাল জাগা পেয়েছি। একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম
ভাঙ্গলো। ফজরের নামায পড়ে একটু ঘুমুবো ভাবলাম, ঘুম আসলো না। চুপচাপ শুয়ে আছি।
স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল মানে? দুঃস্বপ্ন নাকি?
এই ঠাণ্ডায় গোসল করা লাগবে?
না, ওরকম কিছু না।
বলিস কী? সুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গলে তো বিরাট
ঠকেছিস। ঘুম না ভাঙ্গলে অনেকক্ষণ দেখতে পারতিস। ভালো লাগতো। দেখা যাচ্ছে তুই স্বপ্নে
পড়ালেখা শেষ করে এসপি হয়ে গেছিস। এসি গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। বড়লোকের সুন্দরি মেয়ে
বিয়ে করেছিস। আমি বেকার কোম্পানীর ম্যানেজার তোর বাসায় যাতায়াত করতে করতে তোর বউয়ের
সাথে প্রেম শুরু করেছি। একদিন তোর বউয়ের সাথে শয়তানি করার সময় আমাকে হাতেনাতে ধরে হাজতে
ঢুকিয়ে দারোগা দিয়ে পিটাচ্ছিস। তুই নানা রকম জরুরি কাজের ফাঁকে আমার দুর্দশা উঁকি মেরে
দেখছিস আর মিটিমিটি হাসছিস। আমি দারোগার মার খেয়ে মেঝেতে লুটিয়ে আছি আর তুই এসে আমাকে
বলছিস, দেখলি আমার ক্ষমতা? বন্ধু ছিলাম বলে এখনো আমায় হাবাগোবা ভাবিস? মনে করেছিস আমার
বউয়ের সাথে তুই টাংকি মারবি আর আমি হ্যাবলার মত চেয়ে চেয়ে দেখবো?
আমি ভীতু আর ফ্যালফেলে চোখে তোর দিকে তাকিয়ে থাকবো।
আর তুই অট্টহাসি দিতে দিতে মন্ত্রী সাহেবের সাথে মিটিং করতে যাবি। তোর হাইফাই জীবন
চলবে। সহজে ঘুম ভাংবে না। কারন ঘুম ভাংলেই দেখবি আমি তোর চাল নিয়ে রান্না করছি। দেখেও
কিছু বলার সাহস পাচ্ছিস না। মনঃকষ্টের একটা পরিবেশ চলে আসবে। বাস্তবে তোর মত হাবার
এসপি হবার সম্ভাবনা না থাকলেও স্বপ্নের জীবনটাকে দারুণ উপভোগ করতি।
আরে না রে দোস্ত, এরকম কিছু না। কোন সুস্বপ্নও
না।
তাহলে?
আসলে বুঝতেছি না, সুস্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন?
বল দেখি শুনি, আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানি। অনেকগুলি
সুলেমানি বই পড়েছি। যদি দেখিস কাক তোর মাথায় ঠুকরাচ্ছে তাহলে বুঝবি দুনিয়াতে তোর দুঃখ
আছে। মাথার ব্যারাম হবে নয়তো দূর্ভিক্ষে মরবি। তোর মগজ শকুনে খাবে। সাপে তাড়া করলে
বুঝবি পেছনে শত্রু লাগছে। বিবাহ দেখলে বুঝবি তোর গার্লফ্রেন্ড মরছে। যদি দেখিস ছাদ
থেকে লাফাচ্ছিস, তাইলে বুঝবি পুরা জীবনই তোর ব্যর্থ। সফলতা পাবি না। যদি দেখিস শ্বাস
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাইলে বুঝবি তুই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করবি। আর চোখ উল্টালে বিষ
খাবি। কেউ হাত উঁচিয়ে ডাকলে বুঝবি মরণের চিঠি। ক্ষুধা লাগলে বুঝবি দুনিয়াতে তোর রিযিক
শেষ। না খেয়ে বাঁচতে হবে বহু দিন। তৃষ্ণা লাগলে বুঝবি শেষ বয়সে সন্তানেরা তোকে যত্ন করবে না। পোড়া মাংস খেলে বুঝবি তোর হাগু খাওয়া
রোগ হবে। ভায়াগ্রা দেখলে বুঝবি তোর বউ পরকীয়া......
থামতো।
আর শেষ রাতে যা দেখবি তাই সত্যি হবে। একদম হুবহু
সত্যি হবে। বল শুনি, কী স্বপ্ন দেখলি ভোরে?
রাতে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম। দেখলাম মামা তার বাচ্চার
একটা ছবি ফেসবুকে আপলোড করেছে। আর ক্যাপশন দিয়েছে, বাবু তিনদিন হলো তোমাকে দেখি না।
খুব মিস করছি তোমায়। মামি তাতে কমেন্ট করেছে, তুমি কী পাষণ্ড পিতা! আমি হলে বুধবারেই
ফিরে আসতাম। তিনদিন পরে ছেলের ছবি আপলোড করে ঢং দেখাচ্ছে। এরপর ঘুমালাম আর স্বপ্ন শুরু।
স্বপ্নে আমি বারবার আম্মুর মলিন মুখ দেখলাম। আম্মুর এমন মলিন মুখ আমি কোনদিনই দেখিনি।
আমি চোখ বন্ধ করে থাকছি তাও দেখতে পাচ্ছি। রাগে চোখে জোরে টিপ দিছি আর ঘুম ভাঙছে।
তোর আব্বু তো মারা গেছে?
হ, বছর কয়েক হলো।
সে জন্যেই তোর মাকে দেখেছিস। মরা মানুষ তোর দিকে
মলিন মুখে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে আছে- এরকম হলে তো চিল্লাপাল্লা করে আমারো ঘুম ভাঙ্গাতি।
ফাজলামি বাদ দে। তোর সুলেমানি জ্ঞানের কথা বল।
দেখি কী শিখেছিস?
তোর বাড়ি থেকে আসা কয়দিন হলো?
এইতো, সাড়ে তিন মাসের মত।
এক কাজ কর। ক্যাম্পাসে তো অবরোধ চলছে। আজ ক্লাশ
হবে না। নয়টার ট্রেনে বাড়ি যা। আবার সন্ধ্যায় ট্রেন ধরে চলে আসিস।
না, আজকে অবরোধে যাবো। আন্দোলন করবো। দাবি মেনে
নিলে তবেই বাড়ি যাবো। একদিন ক্লাশ মিস হয় হোক।
তুই গরিব মানুষের ছেলে। ওইসব আন্দোলনে তোর যাবার
কী দরকার? মারামারি হলে কী করবি? আন্দোলনের জন্য অনেক পোলাপান আছে। ওরা করবে।
আরে ধুর, ছেলেপেলে কারা আছে? সবাই গরীব। খুঁজে
দেখিস ক্যাম্পাসে আমার থেকেও হাজারটা গরীবের ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করছে। কত ছেলে আছে যারা
রিক্সা চালিয়ে পড়াশোনা করে। সেই দিনও এক ছেলে রাতে রিক্সা নিয়ে বের হইছে আর এক স্যার
তাকে দেখে চিনতে পারছে। ছেলেটা লজ্জায় কাঁচুমাচু। আমিতো দুইটা টিউশনি করি। সবাই যদি
ভয় করে বাড়ি চলে যায়, আন্দোলন করবে কে?
তাও এক কথা। ঠিক আছে থাক, দাবি আদায় করে ক্ষান্ত
হ, বাড়ি যা।
দোস্ত, প্রতিদিন তুই রান্না করিস। আজকে আমি রান্না
করি, তুই ঘুমা।
আচ্ছা কর, ভাত যেন পটপট না করে। ডাল সিদ্ধ করিস।
আজ আলু ভর্তার বদলে ডাল ভর্তা খাই। রাতে ১০০গ্রাম ঘি এনেছি। ঘি দিয়ে মসুর ডাল ভর্তা
করলে দারুণ লাগবে। টেবিলের কোণায় রেখেছি, দেখ। পলিথিনে মোড়ানো আছে। সাথে কয়েকটা শুকনো
মরিচ ভাজিস। ঘিয়ের মধ্যেই ভাজিস।
ও খুব আগ্রহের সাথে আমার টেবিলের কোনা থেকে ঘিয়ের
পলিথিন নিয়ে গেল। চাল ধুয়ে ভাত চড়িয়ে দিল। চুলার তারের আরেক মাথায় কোন প্লাগ নেই। দুই
তারের মাথা সকেটের ফুটোয় ঢুকিয়ে দিতে হয়। ও ছোটবেলায় এরকমভাবে ফ্যান চালাতে গিয়ে হাই
ভোল্টেজের শক খেয়েছিল। সে ভয় এখনো কাটেনি। ভেজা হাতে সকেটে তার ঢুকানোর সাহস হচ্ছে
না। আমতা আমতা করে বলল, দোস্ত, লাইনটা ওকে করে দে তো। হচ্ছে না কেন বুঝতেছি না।
আমি লেপের মধ্যে থেকে উঠে লাইন ওকে করে দিয়ে হাতমুখ
ধুতে গেলাম। ফিরে এসে দেখি ও ঘি গলিয়ে একটা কৌটায় ঢেলেছে। এই কৌটায় করে ও বাড়ি থেকে
আমের আচার এনেছিল। আচারের বেশিরভাগই আমি সাবাড় করেছি। চুরি করে খাওয়া লাগেনি। ও নিজেই
আমাকে দিয়েছে। ওর নাকি আমের আচার খেতে ভালো লাগে না। ওর মা আচার বানিয়ে কৌটায় ভরে চুপ
করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। আন্টির নাকি খিচুড়ির সাথে আমের আচার অমৃতের মত লাগে। আচারের
আরো একটা বয়োম ট্রাংকে আছে। আশাকরি দুই এক দিনের মধ্যে ওইটা বের হবে।
আচ্ছা, তুই সুলেমানি বই পড়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা
বাদে আর কিছু শিখিসনি? যাদু-বিদ্যা, মন্ত্র-টন্ত্র টাইপ কিছু?
হ, শিখেছি। শুনবি?
বল শুনি।
একটা ম্যাজিক শোন তাইলে। তোকে শিখিয়ে দেই। তোর
এলাকার কোন এক দম্পতির নাম বল যাদের একজন মারা গেছে। কে মারা গেছে আর কে বেঁচে আছে
আমি শুধু নাম শুনেই বলে দেব।
স্বামীর নাম- মোশাররফ আর স্ত্রীর নাম ফাতেমা।
স্ত্রী, তার মানে ফাতেমা মারা গেছে।
আরে হইছে তো!
হুম, আরেকটা বল।
তৈয়ব আর মরজিনা।
তৈয়ব।
বলিস কী! একদম সঠিক! কীভাবে পারলি, শিখাবি?
হুম। শোন তাহলে। নামের ‘অক্ষর’ আর ‘কার’ ও ‘ফলা’
নিয়ে খেলা। নামের প্রতি ‘অক্ষরের’ মান ধরবি ২, আর ‘কার’ বা ‘ফলার’ মান ধরবি ৩, তারপর
যতগুলো অক্ষর আছে তাদের ২ দিয়ে গুণ করবি। ‘কার’ গুলোকে ৩ দিয়ে গুণ করবি। তারপর সবগুলো
যোগ করবি। এভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামের হিসাব করে দুটো যোগফলের সমষ্টিকে ৩ দিয়ে
ভাগ করবি। ভাগশেষ যদি ০ বা ১ হয় তাহলে ঐ দম্পতির স্ত্রী মারা গেছে। আর ২ হলে স্বামী
মারা গেছে। ভাগফল কিন্তু নয়, ভাগশেষ। যেমন ধর, তোর বলা নাম,
মোশাররফ
আর ফাতেমা
‘মোশাররফ’ এ মোট ‘অক্ষর’ আছে ৫ টি, তাহলে সূত্রমতে,
৫*২=১০, আর ‘কার’ আছে ২ টি, তাহলে- ২*৩=৬, এবার মোট যোগফল হবে, ১০+৬=১৬।
এবার ‘ফাতেমা’ তে ‘অক্ষর’ আছে ৩ টি, ৩*২=৬, আর
‘কার’ আছে ৩টি, ৩*৩=৯, যোগফল, ৯+৬=১৫।
এখন, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মানের সমষ্টি, ১৬+১৫=৩১,
একে ৩ দিয়ে ভাগ করলে ভাগশেষ হয় ১, অর্থাৎ এই দম্পতিতে স্ত্রী মারা গেছে।
তৈয়ব আর মরজিনাতে, ‘তৈয়ব’ এর মান হবে, ৬+৩=৯, আর
‘মরজিনা’তে, ৮+৬=১৪, মোট হচ্ছে, ৯+১৪=২৩/৩, তাহলে ভাগশেষ হচ্ছে ২, এই দম্পতিতে স্বামী
মারা গেছে। বুঝলি এবার ম্যাজিক?
ইয়াকুব কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর অবাক হয়ে বলল,
আরে তাইতো! সব তো মিলে যাচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব?
ও চুলার দিকে নজর না দিয়ে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ল।
এক দম্পতির হিসাব করে মিলল না। ইয়াকুব হতাশ হয়ে গেল।
কী ব্যাপার? হিসাবে ভুল করলাম নাকি?
না, হিসাবে ভুল করিসনি। এই সূত্র ৮০-৯০% ক্ষেত্রে
কাজ করে। অনেক দম্পতিতে কাজ নাও করতে পারে। ইয়াকুব খাতা কলম ফেলে চুলার কাছে এসে বসল।
আর কিছু জানিস?
হুম, একটা মন্ত্র জানি। স্বামী বশ করা মন্ত্র।
খুবই ইন্টারেস্টিং। স্ত্রী বশ করারটা জানলে আরো
মজার হতো। আচ্ছা বল, এইটাই শুনি।
স্ত্রী বশ করার কোন মন্ত্র নাই। কোন তান্ত্রীক
এই ঝামেলায় কোনদিন পড়ে নাই। যা ঝামেলা সব স্ত্রীদের, তাদের স্বামীদের নিয়ে।
অবাধ্য স্বামীকে বশ করার জন্য স্ত্রীকে তার মাসের
প্রথম রক্তস্রাবের ব্যবহৃত ন্যাকড়া ভাত রান্না করার চুলায় আগুনে পুড়াতে হবে। তারপর
ওই ছাই রান্না শেষে ভাতে মেশাতে হবে। সেখান থেকে প্লেটে করে এক চামচ ভাত নিয়ে কুকুরকে
‘আ তু’ বলে ডেকে খেতে দিতে হবে। অথবা লোকাল ভাষায় কুকুরকে ডেকে ওই খাবার দিতে হবে।
তারপর কুকুরকে খেতে দেয়া ওই প্লেটের কিছু ভাত রেখে দিতে হবে। অর্থাৎ কুকুরের এটো করা
ভাত রেখে দিতে হবে। আর স্বামী কাজ থেকে বাড়ি ফিরলে তাকে ওই প্লেটে হাঁড়ি থেকে ভাত নিয়ে
কুকুরের এটো ভাতের সাথে মিশিয়ে ঠিক কুকুরকে যেমন আদর করে ডেকে খেতে দেয়া হয়েছিল, ঠিক
সেভাবেই স্বামীকেও আদর করে ‘আ তু’ বা লোকাল ভাষায় ডেকে খেতে দিবে। ওই ভাত যদি স্বামী
এক লোকমাও গিলে তো সারা জীবন বউয়ের আঁচল ধরে থাকবে।
ছি ছি। এটা কেমন ধরনের মন্ত্র? যদি না গিলে তো?
বা স্বামী যদি বুঝে ফেলে?
তাহলে যা হবার তাই হবে। এই মন্ত্রের ক্ষেত্রে স্ত্রী’র
হাই রিস্ক থাকে। তবে এটি কারেন্টের মত কাজ করে। গ্রাম বাংলার নারীরা তাদের স্বামীদের
এভাবে যুগ যুগ ধরে...
চুপ কর। তোর এইসব বাজে মন্ত্র শেখার ইচ্ছা আমার
একদম নাই।
ইয়াকুব চিন্তায় পড়ে গেছে। ওই নিজে এই খপ্পরে পড়ে
কিনা তা ভাবছে মনে হয়। এই মন্ত্রের কথা মনে থাকলে শালা জীবনে বউকে জালাবে না।
ইয়াকুব মসুর ডালে ঘি ঢালতে ঢালতে বলল, সজীব, বলতো
সর্বশেষ কবে ঘি মাখিয়ে মসুর ডালের ভর্তা খাইছিস?
মনে নেই। তবে মুসলমানি দিয়ে খাইছিলাম তা মনে আছে।
আমিও। আমার মুসলমানি দেয়ার পর ইয়ের ঘা শুকাতে দেরি
হয়েছিল। তাই আম্মু মনে করেছিল ভর্তাতে ঘি কম হচ্ছে। তারপর ঘিয়ের পরিমান ক্রমেই বাড়ছিল
আর টেস্টও বাড়ছিল। বারো দিন এভাবে খাইছিলাম। পরে যখন আর দিলো না তখন মনে হলো- ইশ, প্রতিদিন
মুসলমানি হয় না কেন?
ঠিক আছে, তুই মেডিকেল থেকে আবার মুসলমানি দিয়ে
আয়। কথা দিলাম ৭ দিন আমি তোকে নিজে হাতে ঘি দিয়ে ডাল ভর্তা করে খাওয়াবো।
ধুর, আমার আম্মুর মত ভর্তা তুই কোনদিনই করতে পারবি
না। ফাইভ স্টার হোটেলের বাবুর্চির কাছে প্রশিক্ষণ নিলেও না। চল, একদিন আমার বাসায়।
ভর্তার সেন্ট দিয়ে তোর চোখ বন্ধ করে দিব।
ওকে, আগে মুসলমানি দিয়া নেই। আমার ইয়ের ঘা শুকাতে
দেরি হলে তোর বাড়ি গিয়ে ভর্তার সেন্ট নিয়া আসমুনে।
ইয়াকুব থেমে থেমে পরপর দুইটা হাই তুলল। একটা হাই
তোলার পর সাথে সাথে আরেকটা হাই কেমনে আসে কে জানে। দুই নম্বর হাই এর ডিউরেশন একটু বেশি
হলো। হাই শেষ না হতেই জিহবা জড়িয়ে ইয়াকুব কথা বলা শুরু করলো।
তুই কোন স্বপ্ন দেখিস না?
কেন দেখবো না? দেখি তো।
গল্প শোনা তো। কেমন স্বপ্ন দেখিস শুনি।
আমার স্বপ্ন সব ভৌতিক টাইপ হয়। তোর তো ভয় লাগবে।
আরে, আমি প্রতি শুক্রবার রাতে ভূত এফ এম শুনি।
ভয় পাই, মজা লাগে।
ভূত এফ এম কী?
আরে, রেডিও ফূর্তির রাসেল ভাইয়ার একটা প্রোগ্রাম।
অনেক মজার। ভূতের আজগুবি সব গল্প শোনায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ। এরা কোন
না কোন ভাবে ভৌতিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে।
তাই নাকি? রিয়েল কাহিনী নিয়ে?
হ।
বলিস কী! তার মানে সত্যি সত্যি ভূত বলে কিছু আছে
নাকি?
কেন? তুই ভূতে বিশ্বাস করিস না?
করতাম না। ছোটবেলায় মা বই দেখে দেখে ভূতের গল্প
পড়ে শোনাতো। ওইটা যে আসলেই আছে তা তো কোনদিন বলেনি। আমি জানতাম ভূতের গল্প আছে। ভূত আছে জানতাম না। কিন্তু কেউ দেখে থাকলে আর বিশ্বাস না করে উপায় কী? করলাম বিশ্বাস।
আচ্ছা তোকে বিশ্বাস করতে হবে না। এখন তোর একটা
ভৌতিক স্বপ্নের কথা বল, শুনি।
স্বপ্ন নয়। তোকে আমি আমার জীবনে ঘটা একটা সত্য
কাহিনী বলব। ভৌতিক নাকি জানি না। তবে আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম এমনটায়।
আচ্ছা, এখন থাক। রাতে বলিস। ঘুমানোর আগে আলো বন্ধ
করে শুনবো। ভয়ে শিউরে উঠবো। এখন শুনলে ভৌতিক কথাকেও হাসির মনে হবে। আর রাতের আন্ধারে
গল্প বলার সময় টেবিল থেকে কলমের ক্যাপ পড়ে গেলেও পিলে চমকে যাবে।