Thursday, April 29, 2021

অতৃপ্তি (পর্ব ২)

রাত দশটা ত্রিশ মিনিট। কেবল খাবার খেলাম। এখন হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করতে যাচ্ছি। সকালে ঠাণ্ডায় হাড়ি পরিষ্কার করা খুব শক্ত কাজ। এখন ধুয়ে রাখলে ফট করে চাল ধুয়ে ভাত তুলে দেওয়া যাবে। ইয়াকুব খাওয়া শেষে ওর প্লেটটাও পরিষ্কার করেনি। বিছানায় উঠে গেছে। আমি এখন হাঁড়ি পরিষ্কার করে রাখলে সকালে ভাত তুলে দেয়ার দায়িত্ব বর্তাবে ইয়াকুবের উপর। এখন ও আমার ডায়েরি খুলে বসেছে। পড়ছে। 

(ডায়েরি)
ইদানীং আমি অনেকটা নিশাচর প্রাণীর মত রাতে হাটাহাটি করছি। বলা চলে অনেকটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগছে অন্ধকার রাতে হাটতে। রাত যত গভীর আর অন্ধকার হয়, চারদিক তত নীরব হয়। হাটাহাটির ব্যাপারটা অসাধারণভাবে জমে উঠে। চারিদিকে থাকে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। নেই কোন মানুষ, নেই কোন শব্দ। শুধু থাকে মন্থর পায়ে চলমান কিছু পশু, আর নিশাচর জাতীয় প্রাণী। গভীর রাতে আধোঘুমে কিছু কুকুর দেখা যায় রাস্তার ধারে, পোয়াল পালার নিচে বা ছাইয়ের স্তুপের উপর। এরা মানুষের পায়ের হালকা শব্দ পেলে লেজ নাড়াতে নাড়াতে কর্কশ শব্দে ঘেউ ঘেউ করে। যেন বলে এইতো ব্যাটা চোর এসেছে। ধরে ফেলেছি। এখন যাবি কোথায়? 

এই কুকুরগুলোর সাথে আমি অনেকটা পরিচিত হয়ে গেছি। এরা আমার পায়ের শব্দে প্রথম কয়েকদিন ঘেউ ঘেউ করলেও এখন আর করে না। আমার আভাস পেলে ঘাড় কাত করে একবার তাকায় শুধু। 

আমি রাস্তা দিয়ে হাটছি। পোকামাকড়ের তেমন ডাকাডাকি শুনতে পাচ্ছি না। রাস্তায় শুধু ইট পাড়া আছে। গত সিজনে সুগার মিলের ট্রাক, কাঠের চাকায় লোহা পরানো মহিষের গাড়ি- ইক্ষু টেনে টেনে রাস্তার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ইটগুলি প্রায় গুঁড়ো করে ফেলেছে। গ্রামের কিছু গরীব মানুষ রাস্তার বিভিন্ন স্থান থেকে দু-একটা করে ইট তুলে বাড়ির টিউবয়েলের চারপাশে বসিয়েছে, গোয়ালঘরে গরুর পায়ের নিচে পেড়েছে। এই কয়টা ইট কোথায় পেয়েছ জিজ্ঞাসা করলে অত্যন্ত ভদ্রভাবে বলে- ওই ভাই, সি দিন অমুক দেকি ভাটা থ্যাকি ইট নিয়া যাচ্ছে, তাই কয়ডা চাইয়া নিলাম। 

রাস্তা উঁচুনিচু। আমি মাঝেমধ্যে হোঁচট খাচ্ছি। প্রতিদিন টর্চ নিয়ে বের হই। আজকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলে ওরা বলে দিয়েছে, আজ আসতে পারবে না। আগামীকাল এসে ঠিক করে দিবে। তাই আজ পুরো গ্রাম অন্ধকার। আমার টর্চটা চার্জ করা হয়নি। একবার টিপে দেখলাম মৃদু মৃদু জ্বলছে। সেজন্যে রেখেই বের হয়েছি। এখন রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। আমার জন্য রাতের শুরু হলেও, অধিকাংশ মানুষের জন্য অর্ধরাত। অনেকের কয়েক চুমুক ঘুম হয়ে গেছে। 

মণ্ডলের খোলায় পাতা মাচা থেকে হৈ হৈ শব্দ শোনা গেল। রাতে যারা ডিউটি দিচ্ছে তারা তাস খেলছে। আগে দু-চার জন করে রাতে ডিউটি দিত। এখন আর দু-চার জন করে বেরুবার সাহস পাচ্ছে না। আট-দশ জন করে বের হচ্ছে। চোর-চুট্টাদের অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। ওরা আর খালি হাতে বের হয় না। রাত একটার পর ডিউটিতে দল পরিবর্তন হয়। একদল ঘুমুতে যায়, অন্যদল আসে। রাত যত বেশি হচ্ছে, অন্ধকার তত বাড়ছে। আজ অমাবস্যার রাত হতে পারে। আমার অল্প আলোর টর্চটা নিয়ে আসা উচিত ছিল। চন্দ্রহীন রাতকে অগ্রাহ্য করা ঠিক হয়নি। 

আমি রাস্তায় হাটছি। হাটতে হাটতে এক কুকুর কয়েকবার কুঁ কুঁ করে আমার পিছু নিয়েছে। আমি যেখানে যাচ্ছি সেও আমার পিছু পিছু সেখানে যাচ্ছে। আমি তাড়াবার চেষ্টা করছি, কিন্তু সে যাচ্ছে না। আমার সাথে থাকছে। 
আমি ওকে বললাম- কিরে, তুই আমার পিছু নিয়েছিস কেন? 
ও ঘ্যোঁৎ ঘ্যোঁৎ শব্দে আমার সামনে এসে লেজ নাড়তে লাগল। 
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলাম। 
ও আরো জোরে লেজ নাড়াচ্ছে। মনে হয় না আজ রাতে আমাকে ছেড়ে ও আর কোথাও যাবে। 
কিরে, তুই কি আমার সাথে থাকবি? 
ও জিহ্বা বের করে লেজ নাড়াচ্ছে। 

আমার এখন আর রাস্তায় হাটতে ইচ্ছা করছে না। সামনে একটা প্রকাণ্ড আম বাগান আছে। বাগানের ভেতর গেলে খারাপ হবে না। ঘুম পেলে গাছের নিচে শুয়ে পড়ব। সঙ্গে কুকুরটা থাকলে কোন ভয় নেই। না, এত রাতে বাগানের ভেতরে শোয়া ঠিক হবে না। ঘুম পেলে বেরিয়ে আসব। মণ্ডলের খোলায় পাতা মাচায় গিয়ে যারা ডিউটি দিচ্ছে তাদের সঙ্গে ঝিমুবো। 
আমি কুকুরটাকে বললাম- এই, বাগানের ভেতর যাবি? 
ও জিহ্বা বের করে লেজ নাড়তে লাগলো। মনে হচ্ছে আপত্তি নেই। 

আমি বাগানের ভেতর হাটছি। কুকুরটা আমার পাশাপাশি হাটছে। আমি থামলে কুকুরও থামছে। ইদানীং হালকা ঠাণ্ডা পড়ছে। গায়ে চাদর বা হালকা গরম কাপড় না পরলে ভাল রকম ঠাণ্ডা লাগছে। এখন রাত প্রায় সোয়া বারোটা। আমি বাগানের মাঝখানে। প্রচণ্ড অন্ধকারে চারিদিকে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আমি শুধু কুকুরের জ্বলজ্বলে চোখ দুটো দেখতে পাচ্ছি। সে যে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, সেটাও বুঝতে পারছি। কুকুর-বিড়ালের চোখ রাতে জ্বলে কেন, কোথায় যেন পড়েছিলাম। মনে নেই।

হ্যাঁরে, তাইতো। আমাদের চোখ তো রাতে জ্বলে না। কুকুর-বিলাইয়ের চোখে শালার এমন কী আছে যে রাতের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে? সত্যি তো জানা দরকার। আর কোন প্রাণীর চোখ কি রাতে জ্বলে? জানিস? 
উটের চোখ জ্বলে। ট্যাপেটাম থাকে তাই। ট্যাপেটাম লুসিডাম। 
ট্যাপেটাম কী? 
এক বিশেষ ধরণের টিশ্যু পর্দা। এর বেশি কিছু জানি না। এই পর্দার কারণে উটের চোখ রাতে জ্বলে। 
আর কুকুর বিড়ালের চোখে কী থাকে তাহলে? 
ট্যাপেটামই থাকার কথা। 
বললি, জানি না। 
কখন বললাম? 
এই যে তোর ডায়েরিতে লেখা। 
ও, তখন মনে ছিল না। 
ও হ্যাঁ। তাইতো। জানিস না, তা তো বলিসনি। বলেছিস, মনে নাই। সরি মাম্মা। 
ইয়াকুব ডায়েরিতে মন দিল। 

(ডায়েরি) 
আমি কিছু না ভেবে আর একটু ভেতরে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু ভেতরে প্রচণ্ড শীত। আমি বাইরে চলে আসার মনস্থির করলাম। মণ্ডলের মাচায় গিয়ে জম্পেস আড্ডা দিব। ভোরে ফজরের নামায পড়ে সকাল দশটা পর্যন্ত টানা একটা ঘুম দিব। আমি বাগানের বাইরে চলে আসছি। হঠাৎ শুনি, পেছন থেকে গোঙানির মত আওয়াজ আসছে। কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড় দিল। একটু গিয়ে থেমে আরো বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করছে। মনে হচ্ছে গোঙানির আওয়াজটা ওখান থেকে আসছে। আমি যথারীতি ঘাবড়ে গেলাম। এত রাতে এখানে কে আসবে? তাছাড়া আমার মত কেউ আসলে এমন গোঙাবে কেন? ছোট বেলায় দাদি-নানির মুখে গল্প শুনেছি, দুষ্ট জিনেরা নাকি এরকম করে মানুষকে নানা ভাবে ডাক দেয়। মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দিলেই বিপদ। তাছাড়া যদি পেছন থেকে ডাক দেয় তাহলে ভুলেও পেছনে তাকানো যাবে না। আচ্ছা, কুকুরের ব্যাপারটা বুঝলাম না। সে অনেক্ষণ থেকে আমার পিছু নিয়েছে। এখন পিছনে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে। আমার কাছে আসছে না। এই কুকুরটা কি জিন জাতীয় কিছু? যে আমাকে বাগানের ভেতর আসতে রসদ জোগালো। এখন আবার পেছনে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে। আমার সাথে খাতির করে আমাকে পেছনে তাকাতে উৎসাহী করছে। আমি এখনো পেছনে তাকাইনি। গোঙানির শব্দ বেড়ে চলেছে। মনে হচ্ছে, চোখ-মুখ শক্ত করে সোজা-সাপ্টা একটা দৌড় দেই। যাকে বলে ভোঁ দৌড়। অথবা খুব জোরে চিৎকার দিয়ে উঠি। লাভ নেই। এ আমার ক্ষতি করতে চাইলে এখনই পারবে। আর চিৎকার দিলে বাইরে থেকে কেউ শুনতে পাবে না। আমার মনে হচ্ছে, ওটা মানুষ। আমি কি পেছনে তাকাবো, নাকি দৌড় দিব? কিছু বুঝতে পারছি না। ধূর! আমি কি কোন কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ? যে, রাত-দুপুরে একটা মানুষ বিপদে পড়ে আমার সাহায্য চাইবে, আর আমি ভূত-প্রেত মনে করে দৌড়ে পালাবো? এটা ঠিক হবে না। পরে হয়তো দেখা যাবে ব্যাপারটা খুবই তুচ্ছ কিছু। প্রকৃতির এই খুবই তুচ্ছ ব্যাপারগুলি আমাদের ভয়ংকরভাবে নাড়া দেয়। আমরা এগুলোকে বুঝে শুনেও এড়িয়ে যেতে পারি না। 
ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছে আমার মেসের এক বড় ভাইয়ের ঘটনা থেকে। ওনার নাম দেলুভাই (ভাল নাম দেলোয়ার। ওনার বন্ধুরা ডাকে ডিয়ার বলে। আর মেসের সব ছোট ভাই আড়ালে দেলু বলে। আমিও বলি)। বেচারা এম্নিতেই খুব ভীতু। একদিন বাড়ি থেকে আসতে রাত করেছে। রাত প্রায় সোয়া বারোটার মত। আমাদের মেসে আসতে আবার একটা ভুতুড়ে রাস্তা (প্রায় আধামাইল খানেক) পার হতে হয়। রাত ন'টার আগ পর্যন্ত ওই রাস্তায় ভ্যান-রিকশা চলে। তবে প্রায় সারারাত বাস-ট্রাক চলে। বেচারা রাতে এসেছে কাউকে ফোন করলেও পারতো। সাহস করে একাই হাটা দিয়েছে। রাস্তার মাঝখানে এসে দেখে, রাস্তা থেকে একটু দূরে ছিটকে পড়া এক লোক হাত ইশারা করে ডাকছে তাকে উঠানোর জন্য। সে বিভৎস চেহারার এক মানুষকে দেখে ভয়ে কথাবার্তা না বলে দৌড় দিয়েছে। পরের দিন ওইখানে এক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। খবরের কাগজে পড়লাম ট্রাকের ধাক্কায় লোকটার মৃত্যু হয়েছে। দেলু ভাই আমাকে তিনদিন পর আফসোস করে বললেন- আমার বোকামির কারণেই লোকটা মরে গেল। আমি ভাবলাম- কী না কী! 
আমি আল্লাহর নাম নিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। আমার মুখ ভয়ে কালো হয়ে গেছে। দেখি, সত্যি সত্যি মানুষ। গাছের ডালে গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলে আছে। কুকুরটা নিচে দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করছে। লোকটা ভালো রকম ফর্সা। এত অন্ধকারেও তার খালি পা আর মুখ দেখা যাচ্ছে। দড়ি দেখা না গেলেও বোঝা যাচ্ছে সে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। দু'হাত দিয়ে গলার ফাঁস ছুড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করছে। সে যতই ফাঁস ছুড়ানোর চেষ্টা করছে, ততই গলায় আটকে যাচ্ছে। 
আমি বললাম- আরে, তুমি নিলয় না? 
সে কথা বলতে পারছে না। তবে গোঙানির আওয়াজ শুনে মনে হল, সে বোলোটে চাচ্ছে- হ্যাঁ ভাই, আমি নিলয়। আমাকে বাঁচান। 
এই ছেলে আমাদের স্কুলে পড়ত। আমি যখন ক্লাস টেনে ও তখন ক্লাস সেভেনে। আমার থেকে তিন-চার বছরের জুনিয়র। আমাকে ছেলেটি খুব শ্রদ্ধা করত। বড় ভাই, বড় ভাই বলে ডাকত। আমার একটা বোন আছে। খুব সুন্দরী। বলতে গেলে হাজারে একটা মেয়ে। সে পড়ত ক্লাস নাইনে। এই ছেলে তখন আমার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ কথা আমার কানে আসা মাত্র ওকে এমন শায়েস্তা করেছি যে, সে আমার বোনের পা ধরে মাফ চেয়েছে। জুনিয়র হয়ে সিনিয়রকে প্রেম নিবেদন! বেয়াদব কোত্থাকার! 
অনেকদিন থেকে ছেলেটার সাথে দেখা নেই। এখন কী করে জানি না। গাছের ডালে ঝুলে আছে কেন বুঝতে পারছি না। বাড়িতে রাগারাগি করেছে, নাকি প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে ঝুলে পড়েছে? এরকম হলে বাঁচার এত চেষ্টা কেন? মরতে এসেছে মরুক। আমি ওকে বাঁচতে হেল্প করলে মুখে ঠিকই থ্যাংক য়্যু বলবে, কিন্তু মনে মনে বলবে- শালা! দরদ দেখাতে এসেছে! আমি মরলে তোর বাপের কী?

হা হা হা। 
ইয়াকুবের অট্টোহাসি শুনলাম। ভুতের গল্প পড়ে ভয় পাবে তো হাসছে। 
আমি বললাম কী হলো? হাসলি কেন? ভয় লাগছে না? 
এটা কী নিলয় সত্যি বলেছিল? 
কোনটা? 
আমি মরলে তোর বাপের কী? 
আরে না, গাধা। ওইটা আমি এমনি লিখে রাখছি। অনুমান করে। 
আচ্ছা পড়তে থাকি। দেখি তোর পিচ্চু দুলাভাইয়ের প্রেম। 
আমি ইয়াকুবের কথায় হার্ট হলাম না। কারন ও জানে, ‘প্রেম’ শব্দটি কোন সেনটেনসে থাকলে তাতে কেউ হার্ট হয় না। এটার আবার একটা ইতিহাস আছে। বীথী নামের এক মেয়ে সংশ্লিষ্ট সেই ঘটনার সাথে। রাতে ইয়াকুবকে আমার গল্প শোনানোর কথা ছিল। বকবক করতে ভালো লাগছে না। কাহিনীটা ডায়েরিতে লেখা ছিল। বের করে দিয়েছি। পড়ছে। 

(ডায়েরি) 
তবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত এক মানুষের কাছে শুনেছিলাম- ফাঁস বেঁধে গেলে মনে হয় ভুলই হল। এতো বেজায় কষ্ট! ইশ, এবারের মত যদি কোন রকম বাঁচতে পারতাম, তাহলে আর জীবনে ফাঁস দেওয়ার কথা মুখেও আনতাম না। ভাগ্য ভাল যে, দড়িটা ছিঁড়ে গেছিল। তাছাড়া সেদিন মরে যেতাম রে। বাড়িতে এসে একটা ছাগল ছদগা দিয়েছি, একমাস রোযা রেখেছি। নদী-সাগর পেলে সাতটা ডুব দিয়ে তওবা করে নিতাম। 
এই ছেলের ব্যাপারে কি এমন ঘটতে পারে? এ বয়সে গলায় দড়ি বেঁধে গাছে ঝুলে দোল খাওয়ার মানে- প্রেম। একদম সরল অংক। সরল অংক যে সবাই ঠিক করে তা তো নয়। বড় বড় শিক্ষিত মানুষরা সরল অংক ভুল করে। আর আমি কে? 
আচ্ছা, এ কি মানুষ? নাকি জিন-ভূত আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে? জিন-ভূত নাকি মাটিতে পা রাখতে পারে না। এদের পা সব সময় মাটির উপরে থাকে। কুকুরটার ব্যাপারও পরিষ্কার নয়। সে কি ভূত, নাকি সত্যিই কুকুর? হাতের কনুইয়ের নিচ দিয়ে তাকালে নাকি বোঝা যায়- আসল, না নকল। অর্থাৎ ভূত না সত্যি জিনিস। যদি ভূত হয়, তাহলে দেখা যায়- পা মাটির উপরে, আর আসল মানুষ বা জীব-জন্তু হলে পা মাটিতে। 

এই ব্যাপারটা আমিও শুনেছি। আসলেই সত্য নাকি রে? ইয়াকুব বলল। 
কোন ব্যাপারটা? 
হাতের নিচ দিয়ে ভুত দেখা। 
ও, জানি না। সত্য-মিথ্যা। তোর সামনে ভুত পড়লে দেখিস। হাত উঁচু-নিচু করে। 
ইয়াকুব ডায়েরী পড়া শুরু করল। 

(ডায়েরি) 
আমি ডান-বাম উভয় হাতের নিচ দিয়ে তাকালাম। কুকুরের পা মাটিতে দেখলাম। নিলয়ের ব্যাপারে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষাটা করা অসম্ভব। ও যেহেতু গাছের ডালে ঝুলে আছে, তাই স্বাভাবিকভাবে ওর পা মাটির উপরে থাকবে। 

আরে, তাই তো! তাহলে ভুত চিনবো কিভাবে? গাছের ডালে বসে থাকলে চেনার অন্য কোন সূত্র তো অবশ্যই আছে। তুই জানিস না তাই। 
আমি যে ওর সাথে ডায়েরি পড়ছি না তাতে ইয়াকুবের খেয়াল নেই। ও কখন কোন জায়গায় কিভাবে আছে আমি বুঝতে পারছি না। হঠাৎ এরকম অসম্পূর্ণ প্রশ্ন শুনে বিরক্ত লাগছে। আমি এবার জিজ্ঞাসা করলাম না- কী জানি না? বলে গেলাম- হুঁ। 

(ডায়েরি) 
নিলয় গোঙানির শব্দ করছে প্রচণ্ডভাবে। ওর কাছে এখন এক সেকেন্ড মনে হচ্ছে হাজার বছর। এই ঘটনার পরে বেঁচে গেলে ওকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বুঝাতে স্যারের এক মিনিটও লাগবে না। আমি নিজেও আপেক্ষিক তত্ত্বের ব্যাপারে অনার্স থার্ড ইয়ারে ক্লিয়ার হয়েছি। 

আপেক্ষিক তত্ত্ব কী রে? ইয়াকুব বলল। 
জড়ানো গলায় বললাম, জানি না।
ইয়াকুব কথা না বাড়িয়ে আবার ডায়েরীতে মন দিল। 

(ডায়েরি) 
যা হোক, আমি ভূত-মানুষের ব্যাপারটা নিশ্চিত না হয়েই ওকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলাম। আমি নিচ থেকে ওর পা ধরতে পারলাম না। নিচ থেকে পা ধরে উঁচু করলে, ও ফাঁসটা ছুড়াতে পারতো। এতক্ষণে ছেলেটার জিহ্বা বের হয়ে এসেছে। আমি ওর পায়ের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আমার নাকের ডগায় এক ফোটা লালা পড়ল। কী করব কিছু বুঝতে পারছি না। একে বাঁচানোর এখন একটাই পথ। সেটি হচ্ছে গাছে উঠে দড়ির গিঁট খুলে দেওয়া। কিন্তু এত বড় গাছে এত রাতে উঠার সাহস কোনভাবেই পাচ্ছি না। এখন রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটা। যদি ও ভূত হয়, আর আমি গাছে উঠার পর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়- তাহলে? ধূর! এদিকে ছেলেটা মরে যাচ্ছে। যদি নিলয় সত্য হয়, তবে বিশাল এক মানব সেবা হবে। নয়তো মরে যাব। 
আমি সাহস করে গাছে উঠলাম। ডালে বাঁধা দড়ির কাছে গিয়ে দেখি দড়িতে শক্ত রকম গিঁট পড়েছে। ছুরি দিয়ে কাটা ছাড়া উপায় দেখছি না। দড়িটা ভেজা, একারণে গিঁট পড়েছে শক্তভাবে। দড়ি থেকে দূর্গন্ধ বেরুচ্ছে। পাঠার প্রসাবের বিশ্রী গন্ধ। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এতক্ষণে মনে হয় ও বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে গোঙানির তীব্রতা কমিয়ে দিয়েছে। আবার এমনও হতে পারে যে, আমাকে উপরে উঠতে দেখে ওর মনে আশা জেগেছে। যার জন্য চুপ মেরে আছে। হাত পা নাড়ানোও আস্তে আস্তে কমছে। লক্ষণ খারাপ। এত রাতে কারো মরা মুখ দেখলে আমার হার্ট এটাক হবে নিশ্চিত। গলায় ফাঁস দিয়ে মরা মানুষের চেহারা নাকি চরম বীভৎস দেখায়। তার উপর এখন রাত। আমি দড়ির গিঁট খোলার প্রাণপণ চেষ্টা করছি। ছোট্ট এই গিঁটটাতে ঝুলে আছে একটা মানুষের জীবন। গিঁটটা ছোট হলেও জীবনটা তুচ্ছ না। 
বহু চেষ্টার পর দড়ির গিঁট খুলতে খুলতে পারলাম। ও ঝুপ করে নিচে পড়ে গেল। আমি খুব তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে এসে ফাঁস ছুড়ালাম। মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি জিহ্বা অর্ধেক বের হয়ে গেছে। দম আটকে গেছে। আমি ওর বুক ডলে দিচ্ছি, জিহ্বা মুখের ভেতর ঠেলে দিচ্ছি। অবাধ্য জিহ্বা মুখ থেকে বের হয়ে আসছে। কিছুতেই মুখের ভেতর থাকতে চাচ্ছে না। অনেক বুক ডলা-ডলির পর ওর দম ফিরে এল। চোখ দুটো নীল হয়ে গেছে। মুখ লাল টকটকে। আমার হাত আর ওর গলা পাঠার মূত্রের গন্ধে মোহিত হয়ে আছে। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। অপলক দৃষ্টিটা স্বাস্থ্যকর না। কঠিন দুঃখের মধ্যে চুপে চুপে হেটে চলা সামান্য আনন্দগুলোকে চরমভাবে উপভোগ করতে কেউই মিস করে না। কিন্তু এর চোখে আমি তেমন উপভোগ্য কিছু দেখছি না। যা দেখছি তা কিছু মহা বিরক্তির সমষ্টি ছাড়া আর কিছু নয়। হঠাৎ করে নিলয় আমাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে ফেলল। 
আমি বললাম- ঠিক আছে, নিলয়। এখন চলো। আর কোন সমস্যা নেই। 
সে ভালভাবে কথা বলতে পারছে না। চাপা গলায় ভাঙা ভাঙা আওয়াজ করছে। কুকুরটা এখন লেজ নাড়ছে। আর মাঝে মাঝে বিকট শব্দে ঘেউ ঘেউ করছে। মনে হচ্ছে, নিলয় বেঁচে যাওয়ায় কুকুরটার বেশ ভাল লেগেছে। আমি নিলয়কে ধরে নিয়ে বাগান থেকে হেটে বের হয়ে আসছি। ও সোজা হয়ে হাটতে পারছে না। মাঝেমধ্যে চাপা-ভাঙা স্বরে কী কী যেন বলছে। আমি ওর কথায় তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। কুকুরটা আমাদের পেছন পেছন আসছে। আমার ভয় এখনো কাটেনি। বরং ছেলেটার চাপা-ভাঙা স্বর আমাকে আরও ভীতু করে তুলছে। 
আমি ওকে কিছুদুর নিয়ে আসার পর বুঝতে পারলাম- ওর সেন্ডু গেঞ্জি রক্তে ভিজে আছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হলে মুখে রক্ত লেগে থাকবে। মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়লে জ্যাকেটে ভরবে। তা নেই। আবার উপরে রক্ত লেগে না থাকলে, সেন্ডু গেঞ্জিতে রক্তের অস্তিত্ব আমার বুঝার কথা নয়। কিন্তু, আমি ব্যাপারটা নিশ্চিত। তাছাড়া গলায় ফাঁস দিলে মুখ দিয়ে রক্ত বের হবারও কোন কারণ নেই। সব মিলিয়ে, আমার ভয় বাড়ছে চক্রবৃদ্ধিহারে। 

তুইও ভয় পাস, সজীব? 
কিছু না বুঝেই বললাম, হুঁ। 
ইয়াকুব এবার ডায়েরি থেকে চোখ তুলে নিল। আমার দিকে তাকালো। আমি যে ওর কথা না শুনে হুঁ-হাঁ করে যাচ্ছি বুঝতে পারলো। 
আমি বললাম, আরে হ, আমি সত্যি ভয় পাই। তবে মাঝেমাঝে। 
ঠিক আছে তোর সাথে এ ব্যাপারে পরে টক করছি। ডায়েরিটা আগে শেষ করি। 

(ডায়েরি) 
আমি বললাম- নিলয়, তুমি গলায় ফাঁস দিচ্ছিলে কেন? ঘটনা কী? বাড়িতে ঝগড়া হয়েছে নাকি? 
ও না সূচক মাথা নাড়ল। 
প্রেম ঘটিত ব্যাপার? 
নিলয় চুপ করে আছে। কোন কথা বলছে না। মাথা নাড়ছে না। 
আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি। হঠাৎ করে নিলয় বিভৎস গলায় আস্তে আস্তে বলল- খাবো! খাবো! খাবো! 
কী খাবে? পানি? পানি খাবে? চলো, আর একটু সামনেই রজবের বাড়ি। এত রাতে টুনাটুনির ঘুম ভাঙিয়ে আমরা হা করে পানি চাইব। রজবের বউ রাগে কিড়মিড় করবে আর পানি দিবে। 

এই রজব কাকুর বউ কি মারা গেছে? 
এবার আমি বললাম, না। প্রতিবার হুঁ-হ্যাঁ করতে আমারো ভালো লাগছে না। 

(ডায়েরি) 
আর রজব হতভম্ব হয়ে আমাদের দেখবে। পুরো ব্যাপার পরিষ্কার হবার পর ওরা দুজন খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তুমি বেঁচে যাওয়ায় তাদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাবে। এর মধ্যে আমরা পানি খেয়ে চম্পট। নিলয় আমার রসিকতাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলল- 
না, আমি আর পানি খাই না। আমি এখন রক্ত খাই। রক্ত খাবো।
শুনে তো আমার পিলে চমকে গেল। এই ছেলে আর কুকুরটা মিলে কি আমাকে চিবানো শুরু করবে? আমার মুখে রক্ত জমাট বাঁধার উপক্রম। হাত-পা কাঁপকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। এত রাতে গলায় দড়ি বেঁধে জিহ্বা বের করে গাছের ডালে দোল খেতে থাকা মরতে উদ্যত ঝুলন্ত মানুষকে উদ্ধার করে প্রকাণ্ড বাগান থেকে রাত দেড়টার সময় সঙ্গে নিয়ে বের হচ্ছি, আর এখন সে ভাঙা গলায় বলছে- আর পানি খাই না! এখন রক্ত খাই! রক্ত খাবো! 
আমার হাত পা ঠাণ্ডায় কাঁপছে এরকম ভঙ্গি নিয়ে বললাম- অবশ্যই খাবে। যার জন্য তুমি মরতে বসেছিলে, তার রক্ত খাবে। তুমি তার জন্য মরলে, সে কি তোমার জন্য জীবন দিত? তুমি তার রক্ত খেয়ে তোমার জন্য তাকে জীবন দিতে বাধ্য করাবে। ঠিক বলেছি? 
আমিও তাই ভাবছি- ও বেশ রাগী গলায় বলল।
তুমি এখানে কখন এসেছো? গলায় ফাঁস দিলে কখন? 
এসেছি অনেকদিন আগে। ফাঁসও দিয়েছি অনেকদিন আগে। যারা জানত তারা কেউ আসেনি। কেউ বুঝেনি। 
আমি নিলয়ের কথা না বুঝেই সান্ত্বনার সুরে বললাম, কে বলল- কেউ আসেনি? আমি তো এসেছি। 
সে চুপ করে আছে। চাপা স্বরে শুধু বলল- দেরি হয়ে গেছে। 
আমরা বাগান থেকে বের হয়ে এসেছি। রাস্তায় কয়েকবার রেস্ট করেছি। এখন রাত আড়াইটার বেশি বাজে। 
আমি নিলয়কে বললাম- তুমি তো এখন মোটামুটি হাটতে পারছো। বাসায় কি রেখে আসবো? নাকি একাই যেতে পারবে? 
আমি আসলে আর নিলয়ের সাথে থাকতে চাচ্ছি না। আমার ভয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ওর বাড়ি এখনো সাড়ে তিন কিলোমিটারের পথ। ওকে অবশ্য এভাবে একা ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না। রাস্তায় টাল খেয়ে পড়ে যেতে পারে। 
আমি বললাম- থাক, তোমাকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসি। 
নিলয়কে জোর জবরদস্তি করেও রাজি করানো গেল না। একা রওনা হল। আমিও ছেড়ে দিলাম। যাক, একাই যাক। একটা ব্যাপারে খটকা লাগল- যে রাস্তা দিয়ে তার বাড়ি কাছে, সেই রাস্তা দিয়ে সে না গিয়ে উল্টো রাস্তায় আমার বাড়ির সামনে দিয়ে হাটা ধরল। এ রাস্তা দিয়ে গেলে ওর বাড়ি প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের পথ। আমি তাকে রাস্তার ব্যাপারটা ধরিয়ে দিলে ও হাত উঁচিয়ে আমাকে থামিয়ে দিল আর ঐ রাস্তা হয়েই বাড়ি গেল। আমিও আর চেঁচামেচি না করে মণ্ডলের মাচার দিকে রওনা হলাম। কুকুরটা আমাকে ছেড়ে নিলয়ের পিছু নিল। 
পশু-পাখিদের একটা সিক্সথ সেন্স আছে। কাজের সময় তারা তা ব্যবহার করে। আকাশে শকুনের উড়াউড়ি, হঠাৎ বাড়ির উঠোনে কাকের ডাকাডাকি- এগুলোকে কুসংস্কার বললেও আমরা পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারি না। এই সেন্স নাকি মানুষের ব্যাপারেও কাজ করে তার নিজের মৃত্যুর ক্ষেত্রে। স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষের সিক্সথ সেন্স কাজ করে না। করলে তার চিকিৎসা করানো দরকার। আবার জ্যোতিষীদেরও তো হাসপাতালে পাওয়া যায় না। আসলে স্বাভাবিক অবস্থাটাও মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। 
আমি মণ্ডলের মাচায় গিয়ে দেখি সবাই ঝিমুচ্ছে। রাত প্রায় চারটা। ফজরের আযান হচ্ছে। আমি মণ্ডলের খোলায় বসানো টিউবয়েলে হাত-মুখ ধুয়ে অযু করলাম। আমার ভয় এখনো কাটেনি। তবে অনেকটা স্বাভাবিক হতে পেরেছি। মসজিদে গিয়ে মুয়াজ্জিনকে বলে নিজেই আযান দিলাম। ফজরের নামায পড়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি সবাই কান্নাকাটি করছে। আছড়-পিছড় কান্না। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম। কেউ কোন কথা বলল না। নিলয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে একজন মৃদু স্বরে বলল- ও কয়েকমাস আগে আমবাগানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি দৌড়ে বাগানে গিয়ে দেখি, দড়িটা শিশিরে ভিজে জড়সড় হয়ে পড়ে আছে। রাতে যেখানে যেভাবে রেখেছি, ঠিক সেখানে সেভাবেই। 
রিয়ার হলদেটে মুখের উপর সূর্য কিরণ পড়তেই মনে হলো- খুবই তুচ্ছ কী যেন, আমাদের অজানা রয়ে গেল। 

 ইয়াকুবের ডায়েরি পড়া মনে হয় শেষ। ডায়েরি বন্ধ করে ইয়াকুব ঘুমুতে গেল। আমি ভয় পাই কিনা সে ব্যাপারে আমার সাথে তার টক করার কথা ছিল। আমি প্রস্তুত ও ছিলাম। রাতে ইয়াকুবের সাথে আমার কোন টক হলো না। শুধু বলল, তোর ডায়েরিটা কি রিয়া কিনে দিয়েছিল? আমি বললাম, না। ওটা রিয়ারই ডায়েরি ছিল। আমি ওর ডায়েরিতেই লিখে রেখেছি ঘটনাটা। 
চলবে...