মোমিন, কয়টা বাজেরে?
সুয়া আটটা ছার।
আজ এত সকালে কেন? প্রতিদিন তো সাড়ে নয়টায় আসিস।
আইজ একটু সকাল সকাল
আইতে কইচিলেন, ছার।
খেয়েছিস কিছু?
জি ছার। রাইতে কইচি, কাইল ছার আমাক সকাল সকাল যাতি কইচেন। ভোরে ড্যাকি
দিও। ছয়টার সুমায় বীথী আমাক আব্বু আব্বু কইরে বিছানা থাইক্কা টাইন্না তুইলে কচ্চে, তুমার খাওয়ার রেডি।
তো এত দেরি করলি
কেন?
আপনের ঘুম যদি এত
সকালে না ভাঙ্গে। আপনেতো এমনিতেই রাইত কইরে ঘুমান।
আমি উঠেছি কয়টায়
জানিস?
না ছার।
ভোর পাঁচটায়। তিনটার
সময় ঘুমিয়েছি। সাড়ে চারটা থেকে ভিসি স্যার তিনবার ফোন দিয়েছেন। টের পাইনি। পাঁচটায়
জাগা পেয়েছি।
টেলিফোনের শব্দে?
না, একটা দুঃস্বপ্ন দেখে। দেখলাম যুথি আমাকে ঢাকা
থেকে ফোন করেছে। বলছে তুমি জমজ বাচ্চার বাবা হয়েছো। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। দুটোই এক রকম। প্যান্ট পরিয়ে দিলে
কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে তোমার বোঝার সাধ্য নেই। আমি কিন্তু বুঝতে পারছি, হি হি হি। একটা বিষয় লক্ষ করলে তুমিও বুঝে যাবা।
আর ভুল হবে না। ছেলেটার দুপায়ের মধ্যে একটা...
হা হা হা, ইতো ভালো স্বপন ছার। দুঃস্বপন কন কেন?
আরে ঘটনাতো এখানেই
শেষ না। আমি খবর শুনে ঢাকায় চলে গেছি। হসপিটালে গিয়ে সবার সামনে আমার দুই সন্তানকে
ছুরি দিয়ে কেটে টুকরা টুকরা করে ওদের মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
কন কী, ছার?
জানিস, তখন আমার একটুও খারাপ লাগেনি। হাসতে হাসতে কেটেছি।
হাতভর্তি গরম রক্ত।
একুন খারাপ লাগচে
না?
না, ওটাতো স্বপ্ন ছিল। সত্য না। খারাপ লাগবে কেন?
জ্ঞানী-গুণী মাইনষের
এই একটা ভালা দিক। চট কইরে একটা ভয়ংকর জিনিসকে এড়ি যাতে পারেন। আমরা পারি না। আমাগোর
সে ক্ষেমতা নাই।
আচ্ছা মোমিন, তোর কাছে এখন সবচে কঠিন কাজ কী হতে পারে বলতো? ভেবে-চিন্তে বলবি।
ছার, ভাবনা-চিন্তা করতে পারমু না। তয় একুন যেইডা মাতায়
আইচে সেইডা হইলো, আমার মাইয়ার চোকে
পানি দেকা। খুদার কছম ছার, এরম হইলে আমি...
ও, বীথীর খবর কী? মেয়েটাকে যে একটা ল্যাপটপ দিলাম। কাজ-টাজ কিছু শিখেছে? নাকি শুধু নাটক সিনেমা দেখে?
জি ছার, মাইয়া তো সারাদিন ল্যাপটপ হাতেই প্যড়ি থাকে।
ওরির ল্যাপটপে শারুখ খান আর ছালমান খানের কিচু বই আচে। বাংলা নাটক আচে কিচু। ওই দেকে
আর আমাক বুজায়ে দেয়। হিন্দি ভাষা তো পুরাই শিইখে ফালাইচে। খুবই বুদ্ধিমতি মাইয়া ছার।
শুধু নাটক সিনেমা
বুঝলেই তো হবে না। কাজ শিখতে হবে। কোন ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি করে দিসনি?
জি ছার, কোতি জানি ভর্তি হওয়ার জন্যি তিন হাজার ট্যাকা
নিলি। প্রতিদিন বিকালে ল্যাপটপ লিয়ে যায়। আর কী সব নোটপত্র আইনে দেইখে দেইখে কম্পিউটার
টিপে। আমি অত সব বুজি না। সেদিন কলাম,
মা
বড় হয়েচো, এখন দেইখে দেইখে পড়লে চলবে? আমার কতায় কোন পাত্তাই দিল না। কইল, 'আব্বু একটা প্রিন্টার কিনে দাও'। পুনের’শ টেকা দিয়া একটা পিন্টার কিনি দিলেম।
সিদিন ওরির জন্মদিনে একটা কাগজে আমার আর ওরির মায়ের নাম যোগ ক্যরি সুমান চিহ্ন দিয়া
ওরির নাম লিকে দরজায় টাঙ্গা দিচে।
মোমিন+রোজিনা=বীথী
কী পাগলি মাইয়া!
আচ্ছা, বীথীর কোন ধরনের মুভি বেশি ভাল লাগে জানিস? রোমান্টিক না একশন?
ইসব কী ছার?
প্রেম নাকি মারামারি?
দুইটাই ছার। কলাম
না, ছালমান আর শারুখ ওরির পচন্দের
নায়ক। আমাকও ওগোর ভক্ত কইরে ফালাইচে। তয়,
ও মাইয়া
তো, শারুখ খানের উপর একটু বেশি
দূর্বল। আমার আবার ছালমান খানকে অচাম লাগে। যেমুন চিহারা, তেমুন বডি, মারপিট সুমান হারে।
আমার ল্যাপটপটা চালু
করতো। একটু কাজ করতে হবে। ও হ্যাঁ,
যুথিকে
আগে ফোন লাগা। আমি একবার দিয়েছিলাম,
রিসিভ
করল না। মনে হয় ঘুমিয়ে আছে। এখন একবার ট্রাই করে দেখতো। উঠল নাকি।
আমি মোমিন। একরামুল
ছারের বাড়িত কাম করি। ছার অসাধারণ একজন মানুষ। তার পুরা নাম প্রফেসর ড. এস. এম. একরামুল
হাসান। ড. মানে বুজি। ডাক্তার। এস. মানে বুজি না। এম. মানেও বুজি না। ভারী কোন ডিগ্রি-ফিগ্রি
হবি হয়তো। ইসব মানুষের তো ডিগ্রির অভাব নাই। নামের আগের অক্ষরের পরে ফুটা থাকার মানেই
ডিগ্রি। তয় ছারের নামের আগে খুব বেশি ফুটা নাই। ছারের মুনে হয় ডিগ্রি কম। এই ডিগ্রি
গুলির নাম কী ছারকে জিজ্ঞাস করতে হবি। সাউস পাই না। যদি জিজ্ঞাস করি, আর ছারের ডিগ্রি যদি কম হয় তাহালে মন খারাপ করবেন
বা কড়া ক্যরি ধুমুক দিয়া কবেন, হারামজাদা ইসবের
মানে বুজিস না? মূর্খ লোকদের তো
এই একটা সমস্যা, বড় মানুষদের কদর
বুজে না। আমার কিন্তু নামের মদ্দ্যে ফুটা দেকলে পিলে চ্যমকি যায়। সুম্মান করার জন্যি
মাতা নুইয়া আসে। তয় ছারের ড. এর ব্যাপারটা আমি মিলাতে পারিনে। উনিতো ডাক্তারি করেন
না। তাছাড়া সব ছারের নামের আগেই ড. আচে। ওনারা সবাই ডাক্তার নাকি তাও জানিনে। ডাক্তার
হলে মেডিকেলে থাকপে। একেনে কেন? সিদিন বীথী কইল, 'জানো আব্বু! একরামুল স্যার আমাকে বললেন তার পুরো
নাম বলতে। জানি কিনা তাই। আমি বললাম,
মোঃ
একরামুল হাসান। স্যার কী মাইন্ড করলেন,
জানো
আব্বু? বললেন, এভাবে বলবে না বীথী, বলবে 'ড. এস. এম. একরামুল
হাসান'।
ছারকে সাউস ক্যরি
জিজ্ঞাস করলে বকাঝকা ক্যরি হয়তো বুজায়ে দিবেন। তখন দেকা যাবি ব্যাপারটা নিতান্তই সুজা
কিচু।
ছারের বউ, মানে ম্যাডাম খুব রাগী টাইপ মানুষ। হ্যাবি গম্ভীর।
তিনি আমাক ল্যাপটপ চালু করা শিখাইচেন। একদম সুজা। খালি এই সুইচটাত টিপ দিতে হবি। আর
হিন্দি বই দেকা শিখাইচে, বীথী।
ছার অতি বাচাল একটা
লোক। তারপরেও ছার আর ম্যাডামের মদ্দ্যে অসম্ভব মিল দেকি। বউ গম্ভীর হওয়ার সুবিদাটা
ছার ভোগ করচেন। ঝগড়াঝাটি কম হয়। মুনে শান্তি থাকে। আমার মুনে শান্তির বালাই নাই। বীথীর
মায়ের সাতে কুনোদিনই কতায় পারি না।
ছার ম্যাডামের সাতে
কতা কচ্চেন। ছার শুদু হুঁ, হ্যাঁ, ও,
ইয়েচ, ওকে ক্যরি যাচ্চেন একনাগাড়ে। ম্যাডামের কোন কতা
আমি শুনতে পেলুম না। একরামুল ছার কতা শেষ কইরে আইলেন।
চলবে...
No comments:
Post a Comment