Wednesday, August 25, 2021

A toxicology based research article on Agricultural and Medicinal practices

Title: Cytotoxicity Assessment of Heritiera Littoralis (Aiton), Madhuca Longifolia (König) Macbr., Nerium Indicum Mill. And Sapium Indicum (Willd.) Leaves on Artemia Salina (L.)

 

Authors: Nishat Fatema, Kamrul Hasan, Alimul Islam, Nelufa Yasmin, Meherun Nesa and Nurul Islam*

 

Abstract

Petroleum ether, CHCl3 and CH3OH extracts of leaves of Heritiera littoralis (Aiton), Madhuca longifolia (König) Macbr., Nerium indicum Mill. and Sapium indicum (Willd.) were subjected to assess cytotoxicity against Artemia salina (L.) nauplii. The petroleum ether extract of H. littoralis leaves showed LC50 values 273.77, 97.27, 51.60, 37.12, 14.60 and 12.59 ppm after 12, 18, 24, 30, 36 and 42 h; the CHCl3 extract showed LC50 values 733.25, 105.51, 40.72 and 18.20 ppm after 6, 12, 18 and 24 h whereas CH3OH extract showed 73.05, 30.62, 24.56, 20.85, 16.21 and 6.71 ppm after 6, 12, 18, 24, 30 and 36 h of exposure respectively. The petroleum ether extract of M. longifolia leaves possess LC50 values 259.35, 115.17, 56.84 and 8.73 ppm after 12, 18, 24 and 30 h; the CHCl3 extract possess LC50 values 585.43, 205.86, 112.74, 75.62, 52.84and 47.34 ppm after 12, 18, 24, 30, 36 and 42 h but CH3OH extract possess LC50 values 185.87, 60.70, 30.11 and 15.39 ppm after 12, 18, 24 and 30 h of exposure respectively. The petroleum ether extract of N. Indicum leaves recorded LC50 values 249.82, 146.07, 80.23, 54.21 and 40.19 ppm after 18, 24, 30, 36 and 42 h; the CHCl3 extract gave LC50 values 36.13, 21.72, 19.03, 16.81 and 16.34 ppm after 12, 18, 24, 30 and 36 h but CH3OH extract recorded LC50 values 394.90, 129.69, 81.50, 73.10 and 37.51 ppm after 18, 24, 30, 36 and 42 h of exposure respectively. Similarly, the petroleum ether extract of S. indicum leaves showed LC50 values 24.79, 13.18 and 4.61 ppm after 12, 18 and 24 h; the CHCl3 extract were 50.45, 42.64, 21.20 and 14.93 ppm after 18, 24, 30 and 36 h of exposure and the CH3OH extract showed LC50 values 306.37, 217.18, 149.38, 73.52, 54.45 and 22.91 ppm after 12, 18, 24, 30, 36 and 42 h of exposure respectively. The intensity of efficacy of the extracts could be arranged in the following descending order of S. indicum (petroleum ether extract) >H. littoralis (CH3OH extract) >M. longifolia (petroleum ether extract) >N. indicum (CHCl3 extract).

অতৃপ্তি (পর্ব ১২/শেষ পর্ব)

 একদম ভরদুপুর। ১.৩০ এর কিছু বেশি হবে। ১৭ই জুন। দুপুরের রোদের তীব্রতার মত পেটের চেঁচামেচিও তীব্রতর। সকাল ৭.৩০ এ খেয়েছি। হারুন ভাইয়ের ক্যান্টিনে।

হারুন ভাইয়ের ক্যান্টিনের সকাল বেলা খাওয়া এক প্লেট ভাত, আলু ভর্তা আর ঝোল ডাল আমার পেটে এতক্ষণে মল হয়ে গেছে। সকালে, প্লেটে হেলাল পিরিচে করে ভাত ছিটিয়ে আবার পিরিচ দিয়ে হালকা করে প্লেটের চারদিক থেকে ভাত ঝেড়ে দিচ্ছে। কোণায় এবড়ো-থেবড়ো ভাবে ভাত ছিটে থাকলে প্লেটের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়, কাস্টমার পছন্দ করে না- হেলালের যুক্তি। হারুন ভাই অবশ্য বললেন- হইচে, আর ফেলিস না, ভাই ভাত একটু বেশি খায়।

পাতিলের ডাল ঢেলে ভর্তা মাখিয়ে ভাতটুকু কোনমতে খেয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলাম। আজকের ডালটা ভালোই ঘন হয়েছে। আলুর দাম কমেছে হয়তো।

সকাল ৮.১৫তে আমার ক্লাশ শুরু। দেরি হয়ে গেলে হাজিরা মিস হয়ে যাবে। স্যার খুব কড়া। ক্লাশে বসে কোনভাবে ‘ইয়েস স্যার’ বলতে মিস হয়ে গেলেও আর হাজিরা পাওয়া যায় না। নাম ডাকা শুরু হলে কয়েক জনের পর আমার নাম এসে যায়। তাই হাজিরা নেয়ার জন্য হলেও স্যারের ক্লাশে টাইম মত আসতে হয়, টাইম মত ‘ইয়েস স্যার’ বলতে হয়। স্যারের কোনদিন ক্লাশে আসতে দেরি হয়েছে- এমন অভিযোগ কোন সিনিয়র ভাইয়ের মুখেও শুনিনি। ভাল করে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাঁর সাম্রাজ্যে বিশাল অশান্তি। রাতে ঘুমানোর আগে স্যার আয়তুল কুরসী না পড়ে ভাবেন, কখন যে মধুর বউয়ের মোরগটা কক কক করে!

আমাকে সময় মত ক্লাশে পৌঁছতে হবে। আমার রোল নম্বর প্রথমদিকে।

টানা তিনটা ক্লাশ হলো। তিনটা হাজিরা দিলাম। দুইবার ‘ইয়েস স্যার’ আর একবার ‘ইয়েস ম্যাডাম’ বললাম। শেষের ক্লাশটা শুকনো মুখে কাটলো। কত কষ্টে যে দেড়টা বাজলো আয়না পেলে মুখ দেখে বলতে পারতাম। সকাল থেকে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম দুইবার। সেখানে আয়না নেই। কবে থেকে যে নেই সেটাও জানি না। ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হওয়ার পরে কোনদিনই দেখিনি।

গত বছর আমাদের ডিপার্টমেন্টের এলামনাই হলো। সব পুরাতন ছাত্র-ছাত্রীরা এসেছিল। আমি ওয়াশরুমে। কারেন্ট নাই, ভেতরটা অন্ধকার। ভারী বয়সের কয়টা লোক এসে ভীড় জমালো। বেশ ভদ্রভাবে তারা এক নম্বর, দু নম্বর সারছে। কোন হৈ চৈ নেই। বয়সের সাথে ভদ্রতা বেড়েছে। আমরা বন্ধুরা একসাথে টয়লেটে এসে এমন ভদ্রতা দেখানো বেশ কঠিন। একসাথে কয়েকজন এলে কারো ভেতরেরটায় ঢোকার সাহস হয় না। উপর থেকে কেউ না কেউ উঁকি দিবে। দেয়াল বেয়ে উঠতে না পারলে বাইরে থেকে পানি ছিটিয়ে দিবে। সেলফি স্টিক দিয়ে মোবাইল উঁচিয়ে ছবি তুলবে। ভেতরেরটা একটু বাদর টাইপ হলে পোজ দিবে, ভঙ্গি করবে।

এনারা এমন নন। হালকা অন্ধকারে সবাই চুপচাপ। শুধু টয়লেটের ভেতর থেকে ট্যাপে পানি ছাড়ার সঁ সঁ শব্দ আসছে। শব্দটি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় সাথে সাথে ভেতরের জন চেঁচিয়ে উঠল- আরে দোস্ত! বদনা তো ওইটাই আছে!

খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। সায়েন্স বিল্ডিং এর দুইটা গেইট এর যে কোন একটি দিয়ে বের হলেই রিক্সার সারি। গেটের সামনে রিক্সাওয়ালারা রিক্সা নিয়ে সারি করে দাঁড়িয়ে থাকে। ছাত্র-শিক্ষক যে কেউ ব্যাগ হাতে বের হলে সবাই মিলে রিক্সা টেনে সামনে এসে দাঁড়ায়।

কোতি যাবেন? কোতি যাবেন?

আমি বের হলাম। সারিতে ৩টা রিক্সা ছিল। কেউ আমার দিকে ফিরেও তাকালো না। আমি কোথাও যাবো কিনা- জিজ্ঞাসা করা তো দুরের কথা। একটা রিক্সা মেয়েদের হল থেকে এসে একটা মেয়েকে নামিয়ে দিয়ে সারিতে দাঁড়ালো। এই রিক্সাটা- আমার গেট থেকে বের হয়ে চেঁচানো রোদে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ। আমি সিড়ি দিয়ে রাস্তায় নামছি, সাথে সাথে ড্রাইভার সাহেব রিক্সার সামনের চাকা আমার দু'পায়ের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্রেক কষলো। গতি কম ছিল বিধায় রিক্সা থেমে গেছে। তেমন খারাপ কিছু ঘটল না। মেয়েটা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল- একটু দেখে-শুনে চালান মামা। আরেকটু হলে তো ভাইয়াটার সর্বনাশ হয়ে যেত।

মেয়েটির মামা বলল, দেখছেন না আফা! কইষা বেরেক দিচি। এক ইঞ্চিও আগাবার সাধ্য নাই চাকার। গতকাইল মালিক নতুন বেরেক লাগা দিচে। কাইল কইষা বেরেক করছিলাম অই গেটে, বেরেক শো ছিঁইড়া চইল্লা গেল। পুরানা হইয়া গেছিল বহুত। মালিকেক ঝাড়ি দিচি আর খরচ দিয়া দিচে। ওই দেখেন, ফুলের গাচটা ভাঙা। ওইডা আমার রিক্সা ঢুকায়া ভাংচি কাইল।

রিক্সা চালকের কথা শুনে, আমি তাকায় আছি ভাঙ্গা গাছের দিকে আর মেয়েটা আমার দিকে।

মেয়েটা আর কথা না বাড়িয়ে পার্স থেকে টাকা বের করে ভাড়া দিয়ে চলে গেল।

আমার দিকে অল্পবয়স্ক এক রিক্সাওয়ালা তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, মাইরা দিলে সর্বনাশ তো ভাইয়ার না, সর্বনাশ ভাবির হইতো। আফায় বুঝে নাই।

আমি বাদে ওরা চারজনই হাসলো। তাদের একদফা হাসি শেষে ব্যাপারটা খুবই মজার ছিল বোঝানোর জন্য আমিও মৃদু দাঁত কেলিয়ে দিলাম। যেন, তাদের কৌতুক বুঝতে আমার একটু সময় লেগেছে তাই। একজন তো বলেই বসলো, মামা বুজে নাই। হা হা হা হা...

কালাম ভাইয়ের দোকান এখন প্রথম ভরসা পেটের চিল্লাচিল্লি থামানোর। যে গেইট দিয়ে বের হয়েছি সেখান থেকে কালাম ভাইয়ের দোকানই সবচেয়ে কাছে। বিশ কদমের মত হবে। অন্য কোথাও যাবার চেয়ে এখানে গিয়ে চারটে ভাত পেটে দেয়া সবচে উত্তম। আবার ২.৩০ থেকে প্রাক্টিকেল ক্লাশ শুরু। ২.১০ টাইম ছিল। কিন্তু ক্লাশ ক্যাপ্টেন স্যারকে বলে ২০ মিনিট পিছিয়ে নিয়েছে। গোসলের টাইম নেই। তবে আরাম করে খাওয়ার টাইমটা পাওয়া গেছে। যারা বিড়ি-সিগ্রেট খায় তাদের জন্য এক্সট্রা সুবিধে হয়েছে। এককাপ চা গিলতে পারবে। বেশ আরামে পারবে।

আমি কালাম ভাইয়ের খাবার দোকানে বসে আছি। বেঞ্চে। এখানে এসে দুইজন পরিচিত লোক পেলাম। আমার মত এরাও পেটের জ্বালা মেটাতে এসেছে। একজন বন্ধু, আরেকজন সিনিয়র এক ভাই। দুইজনই খাওয়া শুরু করেছে। আমার জন্য কালাম ভাই প্লেটে ভাত তুলছে। বলছে- ভাই, মুরগী না মাচ?

যেটার ঝোল স্বাদ হয়েছে সেটা দেন।

মুরগী খান। আইজ দারুণ হইচে মুরগীর ঝোল। আমি নিজে খাইচি ভাই।

দেন।

আমি, আমার বন্ধু আর বড় ভাই তিনজন এক বেঞ্চে একই দিকে ঘুরে বসেছি। আমাদের সামনের দিকে পরের বিল্ডিংয়ের গা ঘেঁষে চারজন বসেছে। আমাদের থেকে ওদের দূরুত্বটা বলা যায় খুব বেশি দূরে নয় আবার কাছেও নয়। ওরা খাচ্ছে, হাসি ঠাট্টা করছে। ওদের সব কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। দু'জন ছেলে আর দু'জন মেয়ে। আমরা ওদের মুখোমুখি পজিশনে। ওদের মধ্যে একটা মেয়ে এতক্ষণ অন্য দিক ঘুরে খাচ্ছিল। মেয়েটাকে দেখতে পাইনি আমরা তিনজনই। মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরে বসা মাত্র তিনজন একসাথে চমকে গেলাম। ভাতের লোকমা মুখের কাছে ধরে আপনমনে বলে উঠলাম- ওয়াও। সিনিয়র ভাইটি আমাদের সাথে মোটামুটি ফ্রী। তিনিও ওয়াও বললেন আমাদের সাথে। শুরু হয়ে গেল খোঁচা মারা। বড় ভাই বললেন, মেয়েটা আমার। তোমরা চোখ দিও না। আমার বন্ধু বলল- হ, ভাই, আপনে নিজের মেয়ের মত দেখেন। আপনি তো আর আমার আপন ভাই না। আমি বললাম, ওর জন্যই আমার জন্ম। ও আমি ভিন্ন আর কারো নয়; হতে পারে না।

কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেল কে নিবে মেয়েটাকে। অন্তত খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত নিজ দখলে থাকুক। আমাদের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বড় ভাই বললেন- আরে মিয়া, ওইখানে দেখো, দুইটা ছেলে আর দুইটা মেয়ে। বুঝছো না। আমাদের বেইল নাই। আগে থেকে বেদখল হয়ে আছে। আরাম করে ভাত খাও। বেদখল জিনিসের লাইগা গলায় ভাত বাধায়ে মইরো না।

ওরা যেভাবে গল্প করছে তাতে ওদের বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। কালাম ভাইয়ের দোকানে এদের আগে কখনো দেখিনি। খাওয়া সূত্রে অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে, মুখ চেনাচিনি হয়েছে। এরা হয়তো বিবিএ ডিপার্টমেন্টের পোলাপান হবে। পোশাক-আশাক বেশ ভংচং আর স্মার্ট। এরা টুকিটাকি’র ঐদিকের হোটেলগুলোতে খায়। সায়েন্স বিল্ডিংয়ের এদিকে এদের আনাগোনা কম।

ওরা চারজন ভাত খাচ্ছে। মুরগীর মাংস নিয়েছে। হয়তো কালাম ভাই-ই দিয়েছে। নতুন মানুষ, মান বাঁচানোর জন্য যেটা রান্না ভাল হয়েছে সেটা দিয়েছে। যেন খেয়ে নাম করে। পরের দিন বন্ধুদের ডেকে নিয়ে আসে। কালাম ভাইয়ের বিক্রি বাড়ে।

কালাম ভাই আমাদের ভালো খাওয়ালেও যা, খারাপ খাওয়ালেও তা। টুকিটাকির ওইদিকে দুপুর দেড়টার সময় খাবারের স্বাদের জন্য তার দোকান ছেড়ে পায়ে হেটে কয়জন অতদুর খেতে যাবে? তাই আমাদের সাথে তরকারীর স্বাদ নিয়ে কালাম ভাইয়ের মাথা ব্যাথা নাই।

একদিন আমি সকালে খিঁচুড়ি খেতে বসেছি। কালাম ভাই বলল, ভাই কয়দিন হলো কালোজিরা ভর্তা করছি। আপনে সকালে খান না তাই পান না। আজ খান। খুব নাম করেছে আমার ভর্তা। আমি ভর্তা মুখে নিয়ে বললাম- বাহ, খুবই স্বাদ হইচে ভাই। পাশের একজন আবার বলল- কই, আমাকেও দেন দেখি। এই লোকটা কালাম ভাইয়ের গ্রামের লোক। আমাদের বিল্ডিংয়ে কাজ করে। পিয়ন। নিজের গ্রামের লোক বলে কালাম ভাই তাকে কালিজিরা ভর্তা দিল না। ছাত্ররা খাবে, নাম করবে। তাকে ভর্তা খাইয়ে কালাম ভাইয়ের লস ছাড়া কিছু নয়। খিঁচুড়ি যে খাচ্ছে তাও বাকি। বেতন পেলে মাস শেষে হিসেব করে রাউন্ড ফিগারে টাকা দিবে। ৪৪০ টাকা হলে ৪০০ টাকা। ৪৮০ টাকা হলে ৪৫০ টাকা। এই দশ-বিশ টাকার জন্য বাকির টাকাটা রাউন্ড ফিগারে আসেনি বিগত সাত বছরের কোন মাসে। এজন্য কালাম ভাইয়ের বড়ই আফসোস।

কিছুক্ষণ পর চামচে করে কালাম ভাই লোকটাকে সামান্য ভর্তা এনে দিল। লোকটা খেয়ে বলল, ভর্তায় রসুন বেটে দিও কালাম। আরো স্বাদ পাবে পোলাপান।

আরো স্বাদ দিয়া কী হবে?

তুমার দুকানের নাম হবে। কালামের দুকানে সব খাবে ছালপাল। বিক্রি বাড়বে।

কালামের এমনি বহু নাম। রসুন পিঁয়াজ না দিলেও ছালপাল এমনি কালামের দুকানে খাবে। বিক্রি নিয়া কালামের চিন্তা করা লাগবে না। বেশ বিশ্বাসের সাথে কথাটা বলল কালাম ভাই।

মেয়েটার হাসি যেন মুক্তাঝরা। যখন ভাত মুখে নিয়ে খিলখিল করে হাসছে তখন দাঁতগুলো সব বের হয়ে যাচ্ছে। একটুও কদাকার লাগছে না। অনেক সময় ভাত গিলে একটু থেমে তারপর হাসছে। ওদের চারজনের মধ্যে একটি ছেলে অনেক হাসির কথা বলছে। জোকস করছে। সময় সময় হাসিতে মেয়েটির দম ঠেকে যাচ্ছে। পানি খেয়ে আবার হাসছে। আমরা বেশ মজা নিচ্ছি।

শব্দ করে হাসলে বেশিরভাগ মেয়েদের ভালো লাগে না। এই মেয়েটাকে লাগছে। যত শব্দ করে হাসছে তত ভাল লাগছে। তাদের হাসির আড্ডা প্রায় শেষের পথে। প্লেটের ভাত ফুরিয়ে এসেছে।

একটা কুকুর এসে তাদের পাশে একটু দূরে পেছনের দু’পা গুটিয়ে সামনের দু'পা খাড়া করে বসে পড়ল। মাটিতে ঘেঁষে লেজ নাড়াচ্ছে। ধুলো উড়ছে। তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। খাওয়া শেষ। হাড়গোর কিছু তার ভাগে থাকার কথা। ওরা কুকুরটাকে খেয়াল করলো। কৌতুককারী ছেলেটি তখনো তার সুন্দরী বান্ধবীকে হাসিতে মশগুল রাখতে ব্যস্ত। ছেলেটি কৌতুকের এক পর্যায়ে প্লেটের কোণায় রাখা একটা মরিচ নিয়ে কুকুরের সামনে একটু দূরে ফেলে দিল। কুকুরটি লেজ নাড়াতে নাড়াতে দৌড়ে খেতে গেল। গিয়ে দেখল মরিচ। কুকুরটি আগের জায়গায় ফিরে এসে দু'পায়ে ঠেস দিয়ে আবারো বসে পড়লো। মেয়েটি কুকুরের এই ঠক খাওয়া দেখে বেশ আনন্দিত হলো। ছেলে বন্ধুটি আবার লম্বা এক দারুচিনি ফেলে দিল প্লেট থেকে। কুকুরটি আবার লাফিয়ে পড়লো। পরেরবার আবার অন্য কিছু দিল, কুকুরটি শেষবারের মত হামলে পড়ল ছেলেটির ছুঁড়ে দেয়া খাবারের উপর। বেচারা আবারো ঠক খেলো। এদিকে মেয়েটি হাড্ডি খাওয়ার জন্য কুকুরের কাণ্ড দেখে হাসতে হাসতে পাগল প্রায়। এখন মেয়েটিকে কেন জানি- আলিফ লায়লার সোফানিজবার মত লাগছে। সোফানিজবা যত রুপবানই হোক না কেন, হাসিতেও সে ভয়ংকর!

ওদের দলের আরেকটি যে মেয়ে ছিল সে এবার কথা বলে উঠলো। তোর পাতে হাড্ডি নাই তো এরকম করছিস কেন? থাম, আমার আছে। বলে মেয়েটি তার পাতের মাংসের টুকরা থেকে মাংস ছাড়িয়ে হাড্ডিটা কুকুরের দিকে ছুঁড়ে দিল।

কুকুর লেজ নাড়াচ্ছে। এবার সে হামলে পড়েনি। তবে হাড্ডি পেয়েছে। খাচ্ছে। কটমট করে।

এই মেয়েটি রুপবতী নয়। এতক্ষণ ওর দিকে কারো চোখ যায়নি। ওখানে আরেকটা মেয়ে যে বসে ছিল সেটা শুধু ঠাহর করতে পেরেছিলাম। এর বেশি না। মেয়েটিকে এখন বেশ রুপবতী দেখাচ্ছে। কুকুরটি খাচ্ছে আর মেয়েটির চোখে মুখে রাজ্যের রাগ।

প্রাক্তন সুন্দরি এখনো হাসছে। অট্টহাসি। আমার বন্ধু আর বড় ভাই দুজনে মুগ্ধ চোখে মেয়েটির হাসি দেখছে। এবারের হাসি কুকুরের ঠক-জিতের জন্য নয়। তার বান্ধবীর সরলতার জন্য। যেন, হাড়টা কুকুরকে দেয়ার থেকে নিজে চিবিয়ে খেলেও অনেক মজা পেত সে।

মাকাল ফল সুন্দর, ডালিমও সুন্দর। একটাকে ভাংলে বমি আসে, আরেকটাতে চোখ জুড়িয়ে যায়।

আমি ঘাড় কাত করে প্লেটে মনযোগ দিলাম। খাবার প্রায় শেষ। মাংসের টুকরাটা রেখে দিয়েছি। সবশেষে খাবো। খাবার শেষ করে মাংস চিবালে মুখে স্বাদ লেগে থাকবে। অনেক্ষণ পরেও মনে হবে আজ দুপুরে মাংস খেয়েছিলাম। ভাল অনুভূতি হবে। পেট চোঁ চোঁ করলে বুঝবো- এ ক্ষুধা নয়, মনের ভুল। মাংস খেয়েছি। হজম হতে তো টাইম লাগবে।

টুকরাটা ধরতে যাবো এমন সময় একটা পাখি আমার প্লেটে টয়লেট করে দিল। টুপ করে খালি প্লেটে মল পড়ে ছিটিয়ে গেল। আমি সোজাসুজি ঘাড় উঁচু করে আকাশের দিকে তাকালাম। মাথার উপরে ডানদিকে ছোট্ট একটা টিনের সাইনবোর্ড। ইংরেজিতে বড় হাতের অক্ষরে ‘কে এফ সি’ লিখা। ছেলেমেয়েরা টাকা তুলে সাইনবোর্ডটা কালাম ভাইকে বানিয়ে দিয়েছে। আদর করে কালাম ভাইয়ের পলিথিনের ছেঁড়া ছাউনির দোকানের নাম দিয়েছে ‘কালামস ফুড কর্ণার।’

 

এখন ইয়াকুব নেই। তাই আর রান্না হয় না। অনেকদিন যাবত এভাবে এখানে সেখানে খেয়ে বেড়াচ্ছি। ইয়াকুব থাকলে রুমে খেতাম। কালাম ভাইয়ের দোকানে এমন কাকের মলের ছিটানি খেতে হতো না।

নতুন রুমমেট এসেছে। মহা ব্যস্ত। কেমিস্ট্রিতে পড়ে। সারাদিন ল্যাব আর টিউশনি। কোথায় খায় তাও জানি না। শুধু রাতে ঘুমুতে আসে। আর সকালে চলে যায়। পুরা যান্ত্রিক ছেলে একটা।

গত মারামারির ছুটি ছিল প্রায় দু'মাস। সেই যে ইয়াকুব বাড়ি গেল, আর আসেনি। একদিন একরামুল স্যারের সাথে রাস্তায় দেখা। স্যার আমাকে ডেকে বললেন, তুমি ইয়াকুবের রুমমেট না?

আমি বললাম, জি স্যার।

ইয়াকুব আর পড়ালেখা করবে না। ওর তেমন আত্মীয় স্বজন নেই। ওর মা টা যদি মরে যেতো তাও ছেলেটাকে আমি বাসায় এনে রাখতাম। মরেওনি। আমি কিভাবে মায়ের কাছ থেকে এ অবস্থায় ছেলেটাকে নিয়ে আসি। লাখ দুয়েক টাকা দিয়ে ওকে একটা ইলেকট্রিক এর দোকান করে দিয়েছি। এখন দোকানদারি করে। মায়ের ঔষুধ পত্র কিনে সংসার চলে কোন রকমে। ওর জিনিষপত্রগুলো হল থেকে নিয়ে যেতে বললাম। বলল, আনার মত তেমন কিছু নাই। আসতে যেতে যা ভাড়া যাবে তাতে ওর খরচও টিকবে না। ওর যা কিছু আছে প্যাকেট করে তুমি নিয়ে নিও। আর ইয়াকুবের হয়ে হলের সিটটা ক্যান্সিল করে দিও। আমি প্রভোস্ট স্যারকে বলে দিবোনি।

এদিকে মোমিনের পুকুরটা নিয়ে একটা মেস বানিয়ে দিয়েছি। মেসের পুরো কাজ এখনো শেষ হয়নি। নিচতলাটা কেবল সারা হয়েছে। দেয়ালে রঙ করার কাজ এখনো বাকি। পুরো বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ না হলে রঙ করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ছাত্ররা উঠা শুরু করেছে। তবে তেমন ভালো ইনকাম এখনো শুরু হয়নি। তাও খরচ বাদ দিয়ে মোমিনের মাসে ২০ হাজার টাকা থাকে। আমি এখনো টাকা নেইনি। মেসটা পুরোদমে চালু হয়ে গেলে তখন দেখা যাবে। ইয়াকুব ছেলেটা আসলে ওর পড়াশোনার খরচ এখান থেকে আরামে চলে যেত।

স্যারের সাথে সালাম বিনিময় করে সেদিন বিদায় হলাম। নতুন রুমমেট আসার পর ইয়াকুবের জিনিষপত্রগুলো গুছিয়ে রেখেছিলাম। যখন গুছাতে যাবো তখন আমার চোখ যেন ডিএসএলআর ক্যামেরা হয়ে গেল। ইয়াকুবের আচারের বয়োমটা চোখের সামনে সাবজেক্ট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। চারপাশের সবকিছু মূহুর্তেই ব্লার হয়ে গেল। এই বয়োমে এখনো অর্ধেকের মত আচার আছে। খেয়ে শেষ করা ঠিক হবে না। এবার গরমের ছুটিতে ইয়াকুবের বাড়ি গিয়ে চুপ করে বয়োমটা আন্টির ঔষুধের টেবিলে রেখে আসবো। আন্টির প্যারালাইজড হাত তো আর কোনদিন আচার বানাতে পারবে না। পারলে গলা টিপে মরে যাবে। মা হলে কী হবে? এখন তার মৃত্যুর উপর দাঁড়িয়ে আছে সন্তানের জীবন।

ক্যাম্পাসে মাঝেমাঝে বীথীর সাথে দেখা হয়। বীথী এখন আগের চেয়ে অনেক স্মার্ট হয়েছে। সুন্দর জামাকাপড় পরে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়। চোখে কাজল দেয়। কপালে টিপ পরে। মুখে হালকা মেকাপও করে। সব সময় হাসিহাসি থাকার ট্রাই করে। আমার সাথে দেখা হলে মৃদু দাঁত বের করে হাসি মুখে বেশ সৌজন্যতা নিয়ে বলে, ভাইয়া কেমন আছেন?

আমি অবশ্য ইনফরমালি বলার চেষ্টা করি- এইতো বীথী, ভালো। তুমি কেমন আছো?

সমাপ্ত...

প্রিয় পাঠক, অনেক ধন্যবাদ আর ভালোবাসা উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য!

অতৃপ্তি (পর্ব ১১)

 রাতে আমি আর ইয়াকুব মেঝেতে বিছানা পেতে ইয়াকুবের মায়ের সাথে ঘুমালাম। মামি আর স্যার ইয়াকুবের ঘরে ঘুমাতে গেলেন।

ইয়াকুব আমাকে একটা গল্প শোনাতে চাইলো। স্বপ্ন। আমি বললাম, তোর ফাউল স্বপ্ন বাদ দে। আমার ভালো লাগে না।

আরে শোন না। এটা ভালো লাগবে।

আমি বিরক্ত ভঙ্গিতে বললাম, ক। ইয়াকুব শুরু কারলো।

যেদিন বাড়িতে আসি। আম্মু আমাকে বলল,

বাপ ইয়াকুব, কয়দিন ধইরা শইলডা ভালা যাচ্চে না। ভিটামিন ওশুধ খাওন দরকার। বাজার থ্যাকি এক ফাইল অ্যানি দেতো।

আমি আম্মুকে ভিটামিন ঔষুধ এনে দেয়ার জন্য বাজারে গেলাম। কেন জানি কোন দোকানে ভিটামিন ঔষুধ পেলাম না। আমি অন্য এলাকায় গেলাম ভিটামিন আনতে। সেখানকার দোকান গুলোতেও ভিটামিন সাপ্লাই নাই বলল। আমার মধ্যে একটা ছটফটানি কাজ করতে লাগলো। শালার ভিটামিন না নিয়ে আজ বাড়ি ঢুকবো না। আমি মুদি দোকানে গিয়েও জিজ্ঞাসা করলাম, ভিটামিন আছে? সব পাবলিক আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। অনেক খোঁজাখুজির পর আমার মনে হল, কনফেকশনারীর দোকানে পাওয়া যেতে পারে। একটা কনফেকশনারীতে জিজ্ঞাসা করলাম। দোকানদার একটু বয়স্ক। বলল, বাবা, ঔশুধ তো ফারমেসীতে পাবা। আমার এইহানে বিস্কুট-চানাচুর, রুটি-পাউরুটি এসব বিক্কিরি হয়।

আমি বললাম, এখানে ফার্মেসী কোথায় বলতে পারেন? চাচা আঙুল তুলে একটা ছোট্ট দোকান দেখায় দিল।

বলল, ঐ লোকের কাচে পাতি পারো।

আমি গেলাম। ছোট্ট একটি দোকান। দোকানের নাম 'লাইলি অশুধ ঘর'। বেঁটে-খাটো কুঁজো এক লোক বসে আছে। এক ঠ্যাঙয়ের উপর আরেক পা তুলে আছে। বাম হাতে বিড়ি আর ডান হাতে চায়ের কাপ। খাচ্ছে। এক চুমুক চা গিলে এক টান বিড়ি। দোকানের ঔষুধের প্যাকেটগুলিতে ধুলো জমে গেছে। বিক্রিও হয় না, পরিষ্কারও করে না।

আমি বললাম, কাকু ভিটামিন আছে?

কুন ব্যান্ডের?

ভিটামিন হলেই হলো। ভাল দেখে একটা দেন।

সেই লোক চায়ের কাপ রেখে বিড়ি হাতে ভিটামিন খুঁজতে গেল। অনেক খোঁজাখুজির পর একটা বোতল আনলো। বলছে, এক ঢাকনি খাবে তো শরীলে বল লাফায়ে উঠবে। পরের ঢাকনি খাওয়ার সুমায় চিন্তায় পড়বে। এত বল গায়ে হলে বাঁচবা কেমনে?

লোকটি 'খাওয়ার আগে বুতোল এইভাবে ঝাঁকাবে' দেখাতে গিয়ে বোতলটি ফেলে দিল। হাত থেকে পড়া মাত্র বোতলটি ভেঙ্গে গেল।

তারপর?

লোকটি থাম বাপ, বলে আবার ভেতরে গেল। আরেকটি বোতল এনে মুছে দিল।

বুজেছো তো? অশুধ খাওয়ার আগে ঝাঁকাতে হয়।

এ দফায় বোতলটা আর ঝাঁকিয়ে দেখালো না। শুধু বলে দিল।

আমি বোতল নিয়ে বাড়ি আসছি। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাড়ির সামনে এসে মনে হল, এক্সপায়ার ডেট আছে নাকি দেখি তো! তাকিয়ে দেখি ৮ মাস আগে শেষ। আম্মু এসব বোঝে না। বোতল নিয়ে রেখে দিলে এক চামচ দুই চামচ করে খাবে। টাকা দিয়ে কেনা জিনিষ ফেলবে না। আমি সে ভয়ে বাড়িতে ঢোকার আগেই বোতলটা ভেঙ্গে বাইরে ফেলে দিলাম। সবশেষে মায়ের জন্য ভিটামিন আনা আমার পক্ষে সম্ভব হলো না।

এইটা তোর স্বপ্ন?

আরে না। এইটা সেদিনের বিকেলের ঘটনা।

তাহলে স্বপ্ন কোনটা?

সেদিন রাতে। আমি ভিটামিন আনতে পারলাম না জন্য মনটা খুব খারাপ। বিষন্ন মনে ঘুমুতে গেলাম। সারারাত আমি ঔষুধ আনার এরকম কয়েকটা স্বপ্ন দেখলাম। কোনটাতেই আমি অবশেষে ঔষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারিনি। সবগুলা স্বপ্ন মনে নাই। শেষ যেটা দেখলাম সেটা মনে আছে।

বল, শুনি।

 

(স্বপ্ন)

আমি কোনদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়নি। তার আকার আকৃতি, সেপ-সাইজ সম্পর্কে কোন ধারণা নাই আমার। স্বপ্নে আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরতে গেছি। একাই। একটি বিল্ডিংয়ের বারান্দা দিয়ে হাটছি। একটা ব্লকের অর্ধেক অতিক্রম করার পর বাঁক নিয়েছি। বাঁকটা ক্রস করেছি। আর দেখি অনেক বড় রুম। সেখানে সিরিয়ালি অনেকগুলো লাশ সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। একজন লোক ঘুরে ঘুরে দেখছে সব লাশগুলো ঠিকঠাক মত আছে কিনা। লোকটা এপ্রন পরা। বেশ ভদ্রলোক। তাকে ঘিরে অনেক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। তারাও এপ্রন পরে আছে। এদের  পায়চারি দেখে বুঝতে বাকি রইল না যে এটা মেডিকেল কলেজ। লাশের সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে প্রতি স্টুডেন্ট এর জন্য একটি করে লাশ বরাদ্দ। পুরো ব্লকের এই অংশটুকুতে কোন হৈ চৈ নেই। একদম শুনশান, নীরব। একজন কেরানীকে ক্লাশ রুমের দরজার সামনে বসিয়ে রাখা হয়েছে, যেন অন্য কেউ বারান্দা দিয়ে হেটে না যায়। লাশ দেখে ভয় পেতে পারে নয়তো তাদের ডিস্টার্ব হবে- ব্যাপারটা এরকম। আমি হাটতে হাটতে ফট করে বারান্দার অনেকখানি ভেতরে চলে গেছি। পরে সেই স্যার আর কেরানি মিলে আমাকে আর সামনে এগুতে দিল না। তারা দুজনই আমার সাথে বেশ ভাল ব্যবহার করলো। ছাত্ররা আমার দিকে কৌতুহলি চোখে তাকাচ্ছিল। এদের কাউকেই আমি চিনি না। সেখানে কিছু ছাত্রীও ছিল সেটা বুঝতে পারলাম। কিন্তু কোন মেয়ের মুখ দেখতে পায়নি। আসলে ওই অল্প সময়ে তেমনভাবে তাকানোর টাইম হয়নি। লাশের সারি দেখে বড়ই হতভম্ব হয়ে গেছিলাম। এত লাশ!

হঠাত একজন আমাকে ডেকে বলল, আপনি ইয়াকুব না?

আমি বললাম- জি, আমি ইয়াকুব।

আপনার আম্মা কে হসপিটালে ভর্তি করেছিলেন মনে আছে? কয়দিন আসেন নাই মিয়া। খোঁজ-খবর নিতে হয় না? কেমন ছেলে আপনি?

আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। ভাবলাম যে ভুলে গেছি হয়তো। আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম, আমি তো ডেইলি আসি। আজ এসে আগের বেডে খুঁজে পাচ্ছি না। অন্য কোন ওয়ার্ডে শিফট করেছেন নাকি? লোকটি আমাকে ৯ নম্বরে যেতে বলল। আমি দৌড় লাগালাম।

গিয়ে দেখি লাশঘর। বাইরে থেকে তালা লাগানো। আমার মাথা তো হ্যাং। আমি তালা ভাঙ্গার চেষ্টা করছি প্রাণপণ। সাদা এপ্রন পরা এক মহিলা এসে আমাকে বলল, ইয়াকুব থামেন। আপনি এসেছেন শুনেছি। আমি ডেথ সার্টিফিকেটটা আনতে গেছিলাম। আপনার মা আজ সকালে মারা গেছেন। আমরা খুব সরি। বহু চেষ্টা করেছি আমরা। ডাক্তাররা কয়েকজন মিলে চেষ্টা করেছেন। কোনভাবেই তার জ্ঞান ফেরেনি। অবশেষে চেয়ারম্যান স্যার দেখে মৃত বলেছেন। আমার অবশ্য বিশ্বাস হয়নি। তবে স্যার যখন বলেছেন- ভেবে চিন্তেই বলেছেন।

মহিলাটি তালা খুলে আমাকে ঘরে নিয়ে গেল। আম্মুকে বেশ  যত্ন সহকারে শুইয়ে রাখা হয়েছে। একটা খাটিয়া টাইপ বেঞ্চিতে। আমি ডেথ সার্টিফিকেটটা পড়ার জন্য চেয়ে নিলাম। দেখি তাতে লিখা 'ভেরি পেইনফুল ডেথ'। ডাঃ অষোক ঘোষ, চেয়ারম্যান, 'অমুক' উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সীলের কালিটা 'অমুকের' জায়গায় আবছায়া হয়ে আছে। নামটা বোঝা গেল না।

আমি বললাম, পেইনফুল ডেথ মানে? এটা কেমন কথা?

মহিলাটি বলল, ডাক্তার বলেছেন, মারা যাওয়ার আগে তার অনেক কষ্ট হয়েছে। কী হয়েছিল আমি জানি না। আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন না, প্লিজ।

আমার দু'চোখ ভরে পানি আসছিল তখন। আম্মু মারা গেছে তার জন্য নয়। পেইনফুল ডেথ শুনে। আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। তার চোখ খোলা। দৃষ্টি স্থির। আম্মুর মাথায় হাত রাখলাম আর দেখি নিশ্বাস নিচ্ছে। মুখ হাসি হাসি। আমি বললাম, আম্মুতো তো বেঁচে আছে।

মহিলাটি বলল, আমি জানি। কিন্তু ডাক্তাররা কোনভাবেই জ্ঞান ফেরাতে পারেননি। তাই মৃত বলে দিয়েছেন।

আমি আম্মুকে ঝাঁকাতে লাগলাম। মুখে হাত বুলিয়ে দিলাম। তার চোখ স্থির আর মুখের এক্সপ্রেশনে কোন পরিবর্তন নেই। অনেক ঝাঁকাঝাঁকি-ডাকাডাকিতেও আম্মুর জ্ঞান ফিরলো না।

মহিলাটি আমাকে বলল, শোনেন মিস্টার ইয়াকুব। আপনার মা মারা যায়নি। একটা ঔষুধের কথা আমি জানি। এরকম রোগীকে ঐ ঔষুধটা দিয়ে ট্রিট দেয়া হয়। ডাক্তাররা কেন সেটা ব্যবহার করলেন না বুঝলাম না। আমি লিখে দিচ্ছি আপনি কিনে আনেন। আমরাই ট্রাই করে দেখি। আমি নিজে হাতে এই ইঞ্জেকশনটা কয়েকজনকে দিয়েছি। সবাই বেঁচে ফিরেছে পরে।

মহিলাটি ডেথ সার্টিফিকেটের পেছনে ঔষুধের নামটা লিখে দিল। আমি দৌড়ে চলে গেলাম ফার্মেসীতে। গুণে রাখলে এই ফার্মেসীর সংখ্যা হাজার খানেক হতো। স্বপ্নে আমি পুরো দশদিন টানা ফার্মেসী ফার্মেসী ঘুরেছি। কেউ এ নামে কোন ঔষুধ দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না। অবশেষে দশদিনের মাথায়- সন্ধ্যায় আমার অই কুঁজো লোকটার কথা মনে হল। তার কাছে পাওয়া যায় কিনা দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখি 'লাইলি অশুধ ঘর' বন্ধ। খোঁজ-খবর করে লোকটার বাড়ি গেলাম। ঔষুধের নামটা দেখালাম। লোকটা বলল, আছে আমার কাছে। আর এক ফাইল থাকার কথা।

আমরা দোকানে আসলাম। লোকটি দোকান খুলে ঔষুধ বের করলো। ঔষুধটি হাতে দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দিল। তিনটা সিরিঞ্জ আছে। তিনটা ফাইল। দশ মিনিট ব্যবধানে তিনবার শিরদাঁড়ার তিনটি ভিন্ন অবস্থানের প্রতি দুই কশেরুকার মাঝখান দিয়ে স্পাইনাল কর্ডে সিরিঞ্জ ঢুকাতে হবে আর ঔষুধ পুশ করতে হবে। অতি দক্ষ লোক ছাড়া এই ইঞ্জেকশন করতে পারবে না। তিনবারের কোন একবার ভুল হলে রোগী আর বাঁচবে না। একটা মানুষের দেহে এই ঔষুধ একবারই মাত্র পুশ করা যাবে। মানে প্রথম তিনবার। দ্বিতীয়বার পুশ করলে পুরো স্পাইনাল কর্ড গলে পানি হয়ে যাবে। আর সফলভাবে তিনবার ইঞ্জেকশন করতে পারলে রোগীর জান থাকলে সে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসবে।

আমি লোকটার কথা শুনে আনন্দে আত্বহারা টাইপ। ঔষুধ নিয়ে হসপিটালে দৌড়াচ্ছি। আম্মু কথা বলবে। আবার জেগে উঠবে। আমি দৌড়াচ্ছি কিন্তু পথ ফুরাচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করলাম হসপিটালে পৌঁছানোর। কিন্তু অবশেষে ঔষুধটা নিয়ে আর আম্মুর কাছে পৌঁছাতে পারিনি।

 

কেন? কী হলো রাস্তায়?

আমি মাঝপথে আর ঘুম ভেঙ্গে গেল। আম্মু ডাকছে।

ইয়াকুব, উঠ বেটা। গরুটার জন্যি ঘাস ক্যাটি আন।

তারপর, ঘাস কাটতে গেলি?

হ। আর সেদিনই আম্মু অজ্ঞান হয়ে উঠোনে পড়ে গেল। আমার সামনে।

বলিস কী?

, আর তারপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পর ঐ মহিলার মত এক ডাক্তার কে দেখলাম। স্বপ্নের মহিলা যতটা মার্জিত ছিল বাস্তবে দেখা ডাক্তারটা ততটাই ডাইনি টাইপ মনে হল। এত খারাপ ব্যবহার! একটা কথাতেও মনে হলো না, ও দুনিয়াতে মেয়ে হয়ে জন্মেছে। কোন কোমলতা নেই ভেতরে।

সরকারি মেডিকেলের ডাক্তাররা ওরকমই হয়।

অন্য ডাক্তারগুলা তো ওরকম না। শুধু ঐ মহিলাটাই ডাইনি বুড়ি।

 

আমি, একরামুল স্যার, মামি সবাই ইয়াকুবের বাড়িতে টানা তিনদিন কাটালাম। এই তিনদিন একরামুল স্যার ভালো খরচাপাতি করলেন। প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু কিনে দিলেন ইয়াকুবকে। আমার একহাজার টাকা খরচ করা লাগলো না। আসার সময় ইয়াকুব আমাকে ২কেজি মসুর ডাল আর বয়মে করে প্রায় হাফ কেজির মত ঘি দিল। আমি নিতে চাইলাম না। তবে না নিয়েও পারলাম না। ইয়াকুব বলল, আম্মুর হাতের ভর্তা তোর কপালে নাই। এগুলা নিয়ে যা। হলে গিয়ে খাস।

একরামুল স্যার মামিকে নিয়ে কোন আত্বীয়ের বাড়ি যাবেন। সেখান থেকে রাজশাহীতে। ইউনিভার্সিটি বন্ধ। কবে খুলবে হদিস নেই। স্যার মামিকে বললেন, চলো যুথী, ঘুরে যাই। মামি না করলেন না।

আমি যাবো আমার বাড়ির দিকে। স্যারদের সাথে বের হলেও আমার রাস্তা অন্যদিকে। ইয়াকুব অবশ্য আমাকে আর কয়দিন থেকে যেতে বলল। থাকলেও পারতাম। থাকলাম না।

ইয়াকুবের বাড়ি থেকে বের হচ্ছি। বাড়ির বাইরে পুকুর পাড়ে একটা মা কুকুর তার বাচ্চার সাথে খেলছে। বাচ্চাটা চিত হয়ে শুয়ে আছে। হাত-পা জড়িয়ে কাঁচুমাঁচু অবস্থা। কুঁ কুঁ করছে। মা কুকুরটা মুখ দিয়ে বাচ্চার পেটে সুড়সুড়ি দিচ্ছে। আর কাঁউ কাঁউ শব্দ করছে। ইয়াকুব মামির ট্রাভেল ব্যাগ হাতে স্যারের পিছে পিছে কুকুরটাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। মা-বেটার কাতুকুতু দেখতে লাগলাম। কাতুকুতু বন্ধ করে তারা দুজনই '' হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

ইয়াকুব বাড়ি আসার পর একটা গান লিখেছে। আন্টির ঘরে ঔষুধের ঝাঁকার মধ্যে ভাঁজ করা একটি কাগজে লেখা। প্রথমে ভাবলাম প্রেসক্রিপশন হবে হয়তো। খুলে দেখি ইয়াকুবের লেখা। পড়ে মুখস্ত করে নিলাম। ইয়াকুব গানটার সুর দিয়েছে কিনা জানি না। জিজ্ঞাসা করা হয়নি।

সেদিনও আকাশে

জানো, হেসেছিল চাঁদ,

পরালো এসে টিপ

এই কপালে।

 

ঘুমিয়েছি সেদিনও

জানো, আমি সারারাত,

রেখেছিলে হাত তাই

এই কপালে।

 

সেদিনও হেসেছি আমি

দম ফাটিয়ে,

আজ কেন রয়েছি

বলো, গোমরা মুখে।

 

ভাবিনি কখনো আমি

জ্বলবে তুমি,

একা তারা হয়ে

ঐ দূর আকাশে।

 

যেও না কখনো শোন

ঐ দেশেতে, যেথা

সন্ধ্যাতারা হয়ে

তুমি জ্বলবে।

আমার হঠাৎ মনে হল- টিনের চালের টেপটা খুলে দিয়ে আসি। বসন্তের আকাশেতো শীতের কুয়াশা থাকে না। বর্ষাকালে ইয়াকুব একটা ব্যবস্থা করে দিবে আবার।

আমি হাটছি। একটু দূরে গিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম। কুকুরটা আবার তার বাচ্চাকে কাতুকুতু দিচ্ছে। বাচ্চাটি হাত-পা গুটিয়ে কুঁ কুঁ করছে। আমার দিকে তাদের আর খেয়াল নেই।

চলবে...

অতৃপ্তি (পর্ব ১০)

 হাত-পা সটান হয়ে পড়ে আছেন ইয়াকুবের মা। বাঁশের বাতায় মাচা করে বানানো খাট। খুঁটিগুলো দুই ফিটের একটু বেশি উঁচু। সংখ্যায় মোট ছয়টা। মাচার উপর বিছানা। একটা শিমুল তুলার লেপ। তার উপর ছেঁড়া লুঙ্গি আর পুরনো শাড়ির কাপড় দিয়ে সেলাই করা কাঁথা। কাঁথার উপরে পুরনো চাদর। অল্পদিন হলো ধুয়ে দেয়া। জড়ো জড়ো হয়ে আছে। মাচায় বিছানো বাঁশের চাটাইয়ের উপরে লেপ থেকে চাদর পর্যন্ত একের পর এক স্তরীভূত হয়ে আছে। নিচ থেকে উপর পর্যন্ত এই স্তরগুলি ক্রমান্নয়ে ছোট। যে কারণে চাটাই থেকে শুরু করে লেপ-কাঁথা সহ চাদর পর্যন্ত সবগুলি পৃথকভাবে দেখা যাচ্ছে। ইয়াকুবের মায়ের মাথা বালিশে কিন্তু পায়ের কিছুটা চাদর আর কাঁথা ছেড়ে লেপের উপর উঠে গেছে। আমার সামনাসামনি আন্টির মাথার পেছনে উঁচু করে হারিকেন টাঙ্গানো। বেশি করে সলতে তুলে দেয়া হয়েছে। আমরা সবাই সবার মুখ দেখতে পাচ্ছি।

গ্রামে কারেন্ট আছে। ইয়াকুবদের বাড়ি মাঠের ভেতরে হওয়ায় খুঁটি থেকে তার টেনে আনার মত দুরুত্তে তাদের বাড়ি পড়েনি। নিয়মানুসারে তারা মিটার পায়নি। লোকজন ধরলে হয়তো একটা খাম্বা বসিয়ে দিত। ইয়াকুবের বাবা বাড়িতে কারেন্টের এত প্রয়োজন মনে করেননি। এমনিতেই মইনুল কাকুর বাড়ি থেকে চোরাই লাইন টেনে কারেন্ট চালাতে গিয়ে ইয়াকুব শক খাইছিল। তারপর বাড়ি থেকে কারেন্টের চিরবিদায় ঘটেছে। যাবতীয় ইলেক্ট্রনিকস সরঞ্জামাদি সব বেচে দিয়েছেন ইয়াকুবের বাবা।

আমরা সবাই ইয়াকুবের মা কে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছি। আমি দাঁড়িয়েছি ইয়াকুবের মায়ের পায়ের দিকটায়। মামি ইয়াকুবের মায়ের ডানহাত ধরে বিছানার বামপাশে বসেছেন। ইয়াকুব ডানপাশে তার মায়ের মাথার কাছে বসেছে। মাথায় হাত দিয়ে আছে। গামছা দিয়ে মাফলারের মত করে তার মায়ের মাথা পেঁচানো। এখন মোটামুটি গরম পড়ে গেছে। গামছা দিয়ে মাথা বেঁধে দেয়া কেন, কে জানে? স্যার দাঁড়িয়ে আছেন মামির বিপরীত দিকে। খাটের মাঝামাঝি পজিশনে। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি ইয়াকুবের মায়ের দিকে।

আন্টির চক্ষু স্থির হয়ে আছে টিনের চালে। ইয়াকুবের মায়ের স্থির চক্ষু বরাবর আমি উপরে তাকালাম। টিনে কয়েক পট্টি করে লাল রঙয়ের টেপ মারা। টেপটা খুলে দিলে আংগুল সাইজ একটা ফুটোর আবির্ভাব হবে। এই ফুটো দিয়ে বৃষ্টির দিনে পানি পড়বে। সকাল বেলা লম্বা ফোকাস করে ঘরে রোদ ঢুকবে। রোদের ছটাটা পড়বে ঠিক আন্টির চিত হয়ে পড়ে থাকা ডান হাতের তালুর উপরে। তারপর সূর্যের পূর্ব থেকে পশ্চিমের গতিময়তায় ছটাটার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটবে। ধীরে ধীরে সূর্যের তেজ কমতে থাকবে। ছটাটা মিলিয়ে যাবে। সন্ধ্যা নামবে। বিছানায় শুয়ে এই ফুটো দিয়ে উল্কা দেখা যাবে। তারা গোনা যাবে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখা এমনকি তার আলো এসে ঘর ভরে দিতেও কোন কার্পণ্য করবে না। আন্টি হয়তো টিনের ফুটো দিয়ে তারা দেখার চিন্তা কোনদিন করেননি। পাশের বিশাল বাবল গাছে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো জোনাকি পোকারা দল বেঁধে ঘরে ঢুকে যাবে, বৃষ্টির পানি পড়ে বিছানা ভিজে যাবে- সে জ্বালায় ইয়াকুবকে দিয়ে বাজার থেকে টেপ কিনে এনে ফুটো বন্ধ করিয়েছেন।

বৃষ্টির পানি গড়ালে এই টেপের আঠা এক সেকেন্ডের মধ্যে নাই হয়ে যাবে- সেটা ইয়াকুব জানে। মায়ের ইচ্ছায় হয়তো টেপ লাগানোর সময় সে জোর করে কিছু বলেনি। মা বলেছে টেপ লাগাতে, ও সরল মনে লাগিয়েছে। কয়েকস্তর করে লাগিয়েছে।

গত ২ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে মারামারি হওয়ার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেল। কবে খুলবে আর খোঁজ খবর নাই। বাড়ি এসে খাচ্ছি-ঘুমাচ্ছি, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি।

বাড়িতে আমার চাপ কম। কখন ফিরি, কখন ঘুমাই, কখন খাই- খোঁজ খবর রাখার কেউ নাই। শুধু মা বলে- খাওয়ার অনিয়ম করিস না বেটা। যেখানেই থাকিস, খাওয়ার টাইমে এসে খেয়ে যাস। খাওয়ার টাইমে আসতে আধা ঘন্টা-এক ঘন্টা কমবেশি হলে কোন প্রবলেম হয় না। গতকাল দুপুরে বাড়িতে খেতে বসেছি। মা বলল, তোর নানি আসতে চাইল তোকে দেখতে। তুই আসলে মোবাইল করতে বলেছিল। কবে থেকে এসে বসে আছিস, আমার তো মনেই নাই। থাম, মোবাইলটা আনি। কল দে, আমি বলে দি, আসতে। মা মোবাইল আনতে গেল আমার ঘরে। মোবাইল এনে আমার হাতে দিল, আমি নানির নাম্বার বের করছি এসময় ইয়াকুবের ফোন।

কিরে? কী অবস্থা? ক্যাম্পাস খোলার কোন খবর পেলি নাকি?

সজীব, শোন, আমার আম্মুর একটু সমস্যা হয়েছে। আমি বাড়ি আসার পরে হঠাত সেদিন আম্মু মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। মাথায় পানি ঢেলে, এটা সেটা করে জ্ঞান ফেরে না। লোকজন ধরে বাজারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। কী যে হলো জানি না। কয়দিন বিছানায় ভালোই ছিল। কথাবার্তাও বলল অল্প অল্প। ভাবলাম আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন পর কথা বার্তা বলা কমা শুরু করল। আম্মু বলল, হাতে পায়ে শক্তি পাচ্ছে না। এবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলাম। নানা ঔষধ পত্র দিয়ে ডাক্তাররা ভালো খাটাখাটনি করল। কিছুতেই কিছু হলো না। অবশেষে মেডিকেল থেকে প্যারালাইজড বলে ফিরিয়ে দিল। মামি কাল এসেছেন আম্মুকে দেখতে। একরামুল স্যার আগামীকাল আসবেন। তুইও চলে আয় আজ। তোর কথা আম্মুর কাছে গল্প করেছিলাম। তোকে দেখতে চেয়েছে। বলছে কখন মরে যাই, ছেলেটাকে আসতে বল। তুই বিকেলে বাস ধরে চলে আয়। তিনটার বাসে উঠতে পারলে রাত ৯.৩০ এর মধ্যে পৌঁছে যাবি। না করিস না দোস্ত।

আচ্ছা দেখছি- বলে আমি ফোন কেটে দিলাম।

ইয়াকুবের ঘটনা আমার মা কে বললাম। মা আমার সাথে আসতে চাইলো। আমি আনিনি। বললাম, থাক। তুমি পরে যেও। ওদের বাসার অবস্থা না জেনে একসাথে দুইজন যাওয়া ঠিক হবে না। আসার সময় মা আমাকে আব্বার থেকে ১০০০ টাকা এক্সট্রা নিয়ে দিল। বলল যে, যাওয়ার সময় কিছু কিনে নিয়ে যাস। তোর বাপ এসব পছন্দ করছে না। এই এক হাজার বের করলাম মেলা কষ্টে। তোর বাপেরও ধার-দেনা হইছে অনেক। বেশি চাপ দিলাম না।

চলবে...