তকুন আমি ২২ বছরের যুবক, ইন্ডিয়া যাইতুম ব্যবসা করিতে। টেকা
পয়সা মাস ছয়েকে লাখ বিশেক ইনকাম করিচিলাম। কিছুদিন স্মাগলিং ব্যবসাতেও মাথা
পাতচিলাম। এই ব্যবসায় ২৩ দিনে ১৮লাখ কামাইলাম। হাতে নগদ সহ মোট ২৫লাখের মত টেকা।
পুরাডাই ক্যাশ।
.
এই সময়ডাতে কলকাতায় একটা হিন্দু মাইয়ার সাথে পরিচয় হইছিল। ১৭
বছরের কম বয়স। তয় হাতে পায়ে ডাঙর। মাঝে মাঝে কথা হইত। আমার সাথে কথা কওনের সময় ও
ওর ঠোঁট আর চোখ এমনভাবে ছন্দে মিলাইতো যেন আমি ওর প্রতিটা চাহনিতে আঁউরে যাইতুম।
.
একদিন সন্ধ্যায় সে আমাকে কইল- আপনেক মারার জন্যি প্ল্যান
করিছে। আইজ রাইতে মারা পড়বেন।
.
কারণ হিসাবে আমি কিছু আঁচ করতে পারচিলাম না। নতুন আর অল্পবয়স্ক
ছাওয়াল আমি। খুন হইয়ে যাব, ব্যবসায় এরকম শত্রু হওয়ার মত সময়ই দিতে পারি নাই।
.
অর্ণবী কইল, আপনার কাছে ১৮লাখ টেকা আছে।
আমি কলাম, ২৫।
.
ওরা জানে আঠেরো। আপনি পালান। এক্ষুনি।
.
টেকাডা লইয়ে আসি? টেকা লইয়েই পলাই?
টেকাগুলান পুটলি বেঁধে নিয়া আসলাম।
.
অর্ণবী? আমি যদি জানাশুনা রাস্তা দিয়া যাই তাহলে তো অরা আমাক
যাতি দিবে না।
.
অর্ণবী ঘরে গেল। বাপ মাকে কী সব যেন কইল, আর তারপর বাহির হইয়ে
আমাক সাথে নিয়া রওনা হল।
.
ষ্টেশনে এসে কইল, আমার সাথে কথা কওনের সময় আপনি অমন হ্যব্দার
মত করে তাকায় থাকেন কেন? নেশা করেন নাকি?
.
আমি তাহার চোক্ষে চোখ রাইখে কলাম, অর্ণবী? আমাকে বাঁচাতে তুমি
এইখানে কেন?
.
অর্ণবী আমাকে জাইপটা ধইরা কইল, আমি কুমারি। আপনি কি আমাকে সংগে
নিবার চান?
.
ট্রেনের মধ্যে কী হয়ছিল কিচ্ছু মনে নাই। শুধু আমাক জিজ্ঞাস করা
অর্ণবীর একটা কথা মনে আচে- "আপনের ধর্মে ভগবানকে আল্লাহ ডাকে, তাই না?"
আমি কলাম- হ।
.
দ্যাশে আসার পর অর্ণবী আমার সেই ২৫ লাখ টেকা মানুষের মদ্দ্যে
বিলি করে দিল। আমি মইরে গেলে টেকাডা তো অন্যেরই হইত।
.
পরে অর্ণবী আমাক আর ইন্ডিয়া যাইতে দেয় নি। শূন্য হাতে আমাগোর
এই জীবনের শুরু। আমি তকুন ২৩বছর ছুঁইছুঁই। আর এহন রিশকা চালক।
.
আইজ আমার আর অর্ণবীর সাতাইশ বছর, অর্ণবীর সাথে কথা কইতে গেলে
সে তার কাজলে আঁকা ভরাট চোক্ষু দুইডা আকাশ মুখো কইরা আমার দিকে তাকায়া কাঁপাকাঁপা
গলায় এখনো কয়- নেশা কইরে মোর সামনে আসবা না তো। বিরাক্ত।
No comments:
Post a Comment